শেখ শাবাব আহমেদ। ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশে (বিএটিবি)। বর্তমানে কর্মরত প্রতিষ্ঠানটির হেড অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স হিসেবে। নারী দিবসে কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ, পুরুষ কর্মকর্তাদের ভূমিকা, প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত

ঢাকা পোস্ট : আপনি দীর্ঘ দিন ধরে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে কী ধরনের পদক্ষেপ রয়েছে?

শেখ শাবাব আহমেদ: ২০০৬ সালে যখন কাজ শুরু করি তখন কিন্তু এখানে নারীদের জন্য আজকের এ পরিবেশটা ছিল না । প্রথমত, আমাদের চাকরি করতে হয়েছে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায়। পরে যখন ঢাকায় হেড অফিসে এলাম দেখলাম নারীরা মানবসম্পদ, কমিউনিকেশন ও অর্থ বিভাগে বেশি কাজ করছেন। তবে ১০-১২ বছর আগে বিএটিবি কর্তৃপক্ষ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় বলা হয় পুরুষরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করতে পারলে নারীরা কেন পারবে না। আমাদের সেই সময়ই যাত্রা শুরু। কয়েক বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে ঢাকায় এসে দেখি নারীরা সামাজিক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। সেখান থেকে আমাদের নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে সূচনা হয়। পরে মার্কেটিংয়ে সাফল্য পাওয়ার পর আমরা চিন্তা করলাম ফ্যাক্টরি ফ্লোরে কেন একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বা মেশিন অপারেটর হিসেবে নারী কাজ করতে পারবেন না? আমাদের ফ্যাক্টরিতে বর্তমানে অনেক নারী কাজ করছেন। পুরো ব্যবসার প্রতিটি পদক্ষেপে নারীদের পদচারণা রয়েছে। যে যার জায়গাতে খুব ভালোভাবে কাজ করছেন। 

ঢাকা পোস্ট : একজন পুরুষ কর্মকর্তার অধীনে নারীকে কাজ করার জন্য সার্বিক পরিবেশ কেমন থাকা উচিত এবং পুরুষ কর্মকর্তার কেমন ভূমিকা থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

শেখ শাবাব আহমেদ : একটা প্রতিষ্ঠানকে নারীবান্ধব করতে গেলে কয়েকটা দিকে নজর রাখা জরুরি। নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিবেশ, যা প্রতিষ্ঠানকেই নিশ্চিত করতে হবে। নারী এবং পুরুষ দুজনকে সাপোর্টিং মেন্টালিটির হতে হবে। এদিক দিয়ে বিএটি বাংলাদেশ খুব লাকি। ৭ জনের পরিচালনা পরিষদের ২ জনই নারী ছিলেন সেই সময়। তাদের দেখে অন্য নারীরা এটাকে রোল মডেল হিসেবে নিয়েছেন। আমার বস একজন নারী এবং আমার টিমে বেশ কয়জন নারী কাজ করেন। সবার আগে যে জিনিসটা দরকার প্রতিষ্ঠানে জেন্ডার ইকুয়্যাল কনসেপ্ট প্রতিষ্ঠা করা।  যখন আমি আমার টিমের সঙ্গে কাজ করছি তখন আমার অ্যাপ্রোচটা কেমন হচ্ছে। পুরুষের সঙ্গে যেভাবে কাজ করছি, সেভাবে একজন নারীর সঙ্গে করছি কি না। সেম প্ল্যাটফর্মে দুজনকেই দেখা দরকার। ব্যালেন্সিং রোলে আনতে হবে। আমরা যারা কর্মক্ষেত্রে নারীদের তদারকি করছি তাদের যেন একটা সিমিলার এনভারনমেন্ট দিতে পারি, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। 

শেখ শাবাব আহমেদ 

ঢাকা পোস্ট:  নারী বস হওয়ার কারণে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?

শেখ শাবাব আহমেদ :  আমি পরিবারের সঙ্গে বড় হয়েছি। যেখানে মা বোনসহ অসংখ্য নারী ছিলেন। তাই চাকরিতে যোগদানের পর যখন দেখলাম আমার বস একজন নারী তখন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হব তা মনেও আসেনি। 
নারী সহকর্মী বা বসকে বুঝতে, নিজেকে বসের কাছে বুঝাতে কিছুটা সময় লাগে, সে সময়টা আমাকে দিতে হয়েছিল। এখন সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে সহজেই এ পরিবেশটা পরিচালনা করতে পারছি। 

ঢাকা পোস্ট : বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের বাধা আছে বলে আপনি মনে করেন?

শেখ শাবাব আহমেদ: অনেক প্রতিষ্ঠান বলে তাদের নারীবান্ধব পরিবেশ কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কতটুকু এ বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস সেটা আগে লক্ষ্য করতে হবে। এজন্য কিছু পলিসি সাপোর্ট দরকার। বিএটি বাংলাদেশ নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সুবিধাও চালু করেছি। অর্থাৎ নারীকে কর্মক্ষেত্রে মনযোগ দেওয়ার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ দিতে হবে। 

ঢাকা পোস্ট : আজকের শেখ শাবাব আহমেদ হয়ে ওঠার গল্পটা শুনতে চাই।

শেখ শাবাব আহমেদ : আমার বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন । আমরা দুই ভাই এক বোন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে বিবিএ পাস করেছি। পাস করার পর এটাই আমার প্রথম চাকরি। প্রথমে কাজ করেছি মার্কেটিং বিভাগে। খুলনা, রাজশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সেলসে কাজ করেছি। পরে এসে হেড অফিসে কাজ করি। ক্যারিয়ারে একটু চ্যালেঞ্জ নিয়ে করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে আসি। সব কিছুর মাধ্যমে আমার কাছে এখন মনে হয়, আমি অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে পারি। এ ১৫ বছরে করপোরেট চাকরির পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে কাজ করার বিষয় শিখতে পেরেছি।

এএসএস/এসকেডি/এসএম/এমএমজে