কেরানীগঞ্জে গড়ে উঠছে অনুমোদনহীন আবাসন প্রকল্প/ ফাইল ছবি

দিনদিন অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে কেরানীগঞ্জ। ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় সাধারণ মানুষেরও বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরীর মাঝের এ এলাকায় জমি কেনার বা বাড়ি করার আগ্রহ বাড়ছে। ফলে সেখানে আবাসন ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলছেন আবাসিক প্রকল্প। এরইমধ্যে সেখানে নামে-বেনামে প্রায় ৮০টির মতো আবাসন প্রকল গড়ে উঠেছে। যার একটিরও অনুমোদন নেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)।

তবে এসব প্রকল্পের মধ্যে বড় ১৫টি প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের প্লট বিক্রি বন্ধ করতে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে রাজউক। স্থানীয় প্রশাসনকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে চিঠিতেই শুধু সীমাবদ্ধ না থেকে খুব দ্রুত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে চায় সংস্থাটি। 

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) রাজউক সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদনহীন কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫টিকে প্লট বিক্রি বন্ধ করতে চিঠি দেওয়া হলেও তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। উল্টো প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে রাজউক।

এ বিয়য়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, কেরানীগঞ্জে অনুমোদনহীন প্রকল্পগুলোকে প্রথমে চিঠি দিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এরপর রাজউকের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এদিকে রাজউক আওতাভুক্ত দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ, পূর্ব আগানগর, চরকালীগঞ্জ, খেজুরবাগ, শুভাঢ্যাসহ অনেক এলাকায় নকশা অনুমোদন ছাড়াই তৈরি হচ্ছে একের পর এক হাউজিং প্রকল্প, ভবন, ব্যক্তিগত বাড়ি। ফলে দিনদিন কেরানীগঞ্জ হয়ে উঠছে এক অপরিকল্পিত এলাকা। যা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ ফল বয়ে আনবে। আবার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান ও যথাযথ নাগরিক ‍সুবিধা পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়েই ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে পরিকল্পিত আবাসিক প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

জানা গেছে, আবাসন খাতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় কেরানীগঞ্জ মডেল টাউনে এ প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২ হাজার ৫০০ একর (কম-বেশি) জমিতে প্রকল্প সীমানা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগরীর সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ২০০ ফুট প্রশস্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১২০ ফুট প্রশস্ত প্রায় ১.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি সংযোগ সড়কের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এখানে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্বলিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে তোলা হবে। ফলে তা ঢাকার আবাসন, কর্মসংস্থান ও নাগরিক খাতের সমস্যাগুলো লাঘবের একটি কার্যকরী উদ্যোগ হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ঢাকার কেরানীগঞ্জের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পে জনসংখ্যার অনুপাতে ও নগর পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে নাগরিক সুবিধার প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। এছাড়া বয়োবৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য প্রকল্পে প্রায় ২০ বিঘা (৬.৬১) একর আয়তনের অ্যাসিস্ট্যান্ট লিভিং জোনের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে।

এছাড়া প্রস্তাবিত ২ হাজার ৫০০ একর প্রকল্প এলাকার মধ্যে আনুমানিক ২০০ একর এলাকা নিয়ে ল্যান্ড রিডজাস্টমেন্ট জোন অ্যান্ড লো ইনকাম হাউজিং-এর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী ও কৃষকদের প্রকল্পে পুনর্বাসনের সুযোগ হবে। ফলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগণের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। কৃষিবান্ধব নগরায়ন, জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ ও জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০২১ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ্য হওয়ায় রাজউকের এ ধরনের মৌলিক উদ্যোগ ঢাকা মহানগরীর আবাসন সংকট হ্রাসের পাশাপাশি ক্রমহ্রাসমান কৃষিভূমি রক্ষায় একটি বড় পদক্ষেপ হবে। 

এ অবস্থায় কেরানীগঞ্জে অপরিকল্পতি এবং রাজউকের অনুমোদন না নিয়ে এমন প্রায় ৮০ আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠলে পরিকল্পতি এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যাবে না। পাশাপাশি এসব প্রকল্পে যেসব মানুষ প্লট কিনছেন তারাও বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা অনুযায়ী পরবর্তীতে বাড়ির নকশা, ভবন নির্মাণের অনুমতি পাবে না। তাই সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে বলা হয়েছে রাজউকের পক্ষ থেকে। 

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনিস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কেরানীগঞ্জে পরিকল্পিত আবাসিক, নগরায়ন গড়তে বাধা সৃষ্টি হবে এসব অনুমোদনহীন, অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পগুলোর জন্য। তাই জনসাধারণের কথা বিবেচনা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচিত হবে অনুমোদনহীনদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সেই সঙ্গে পরিকল্পিত, সার্বিক সুবিধা সম্মিলিত আবাসন গড়ার জন্য করণীয় নির্ধারণ এবং তা মনিটরিং করতে হবে রাজউককে।

সম্প্রতি রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) মুহম্মদ কামরুজ্জামান রাজউকের আওতাধীন এলাকার পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকায় ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন না করতে বলা হয়।

এএসএস/জেডএস