মাঠ প্রশাসনে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। এসব সমস্যার কথা জেলা প্রশাসক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। এরপর আলোচনার পর সমাধানের পথ বেরিয়ে আসে। পাশাপাশি সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের সমন্বয় আরও ভালো হয়। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন জেলা প্রশাসকরা।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩’। সকাল ১০টায় নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। 

প্রধানমন্ত্রীর সামনে উন্নয়ন, সমস্যা, চ্যালেঞ্জ এবং বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির কথা তুলে ধরবেন ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা। সব শুনে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। 

এছাড়া জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি সেখানে বক্তব্য রাখবেন।

জেলা প্রশাসক সম্মেলনের (ডিসি সম্মেলন) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘মুক্ত আলোচনা’। বেলা ১১টা ১৬ মিনিট থেকে ১২টা পর্যন্ত এ মুক্ত আলোচনা চলবে। এ পর্বে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উন্নয়ন, সমস্যা, চ্যালেঞ্জ এবং বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির কথা তুলে ধরবেন ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা। সব শুনে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। 

এরপর দুপুর ১২টা ১ মিনিট থেকে ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেবেন ডিসিরা।
সন্ধ্যায় বিআইসিসিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসিদের নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হবে।

এ সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব পাওয়া গেছে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিভাগ থেকে। এ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব ২৩টি। 

এদিকে সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত কার্য-অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে। 

তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব পাওয়া গেছে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিভাগ থেকে। এ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব ২৩টি। এরপর ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ১৫টি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ১৩টি, সুরক্ষা সেবা বিভাগ সংক্রান্ত ১১টি এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ১০টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে।

এবারের সম্মেলনে মোট ২৬টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্যঅধিবেশন রয়েছে ২০টি। এছাড়া একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

ডিসি সম্মেলন থেকে প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্মেলনে আমরা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করি। এগুলো যাতে আরও মসৃণ হয়, বেগবান হয়, সমন্বয়টা যাতে আরও ভালো হয়—এ বিষয়গুলোই আমরা উপস্থাপন করি। সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবরা থাকেন, তাদের সঙ্গে কথা বলি। সম্মেলনের মাধ্যমে সমন্বয়টা আরও ভালো হয়। এই ধারাটি অব্যাহত থাকবে, এটিই প্রত্যাশা। 

তিনি বলেন, সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত মাঠ প্রশাসনে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোও আমরা তুলে ধরি। তারা নির্দেশনা দেন। সম্মেলনের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধানের পথও বের হয়ে আসে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করি। 

কুড়িগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিসি সম্মেলন নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা সবসময়ই ভালো। এই সম্মেলন থেকে আমরা বিভিন্ন নির্দেশনা পাই। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করি। 

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি সরকারের নীতি-নির্ধারণের বিষয়। সেখান থেকে আমরা বিভিন্ন নির্দেশনা পাব। সরকারের মাঠ পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কৌশলগুলো আরও টেকসই হবে। সেইসঙ্গে আমাদেরও যদি কোথাও চ্যালেঞ্জ থাকে বা সমস্যা থাকে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। 

রোববার (২২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের প্রশাসনে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে নতুন গতির সঞ্চার হবে।

ডিসি সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদারকরণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার, ই-গভর্নেন্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

এসএইচআর/কেএ/জেএস