বইমেলায় কাগজের দামের প্রভাব, বিপাকে প্রকাশক-পাঠকরা
অমর একুশে বইমেলা শুরু হলেই নতুন বইয়ের গন্ধে মৌমাছির মতো ছুটে আসেন বইপ্রেমীরা। তাই তো ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই দেখা যায় বাংলা অ্যাকাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইপ্রেমীদের ঢল। এবারের মেলাও বই প্রেমীদের উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। তবে কাগজের দাম বৃদ্ধিতে বইয়ের বাজারেও প্রভাব পড়ায় বিপাকে পড়ছেন প্রকাশক ও পাঠক উভয়ই।
প্রকাশকরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বাংলাদেশে কাগজের দাম বেশি। এক বছরে কাগজের দাম প্রায় দিগুণ হয়েছে ও তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই বাধ্য হয়ে বইয়ের দাম বাড়িয়েছেন তারা। তবুও পাঠকের কথা বিবেচনায় রেখে ভর্তুকি দিয়ে হলেও অতিরিক্ত দাম না রাখার চেষ্টা করেছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পছন্দের সব বই কিনতে পারছেন না পাঠকরা। তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বইয়ের দামটাও বেড়ে যাওয়ায় চাইলেও আগের মতো বই কিনতে পারছেন না তারা। পাঠকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে বইয়ের দামে সমন্বিত সিদ্ধান্ত আসতে পারত বলে মনে করেন তারা।
বিজ্ঞাপন
বই কেনার জন্য তালিকা তৈরি করে মেলায় এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ আহমেদ। তার সঙ্গে কথা ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, পছন্দের ১০টি বইয়ের তালিকা হাতে নিয়ে মেলায় এসেছি। কিন্তু এসে দেখি বাজেটের তুলনায় বইয়ের দাম অনেক বেশি। তাই এখনো কিনতে পারছি না। অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলতে হয়। বইয়ের দাম আগের মতো থাকলে এত চিন্তা করা লাগত না। এখন কেন জানি বইয়ের আশেপাশে যেতেও ভয় লাগে।
বইমেলায় আসা আরেক দর্শনার্থী সজিব মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বই কেনার জন্য আলাদা কোনো বাজেট নেই। তবুও ভেবেছিলাম কিছু টাকা জমিয়ে অন্তত ১০-১৫টা ভালো মানের বই কিনব। কিন্তু মেলায় এসে দেখি বইয়ের যা দাম। বইয়ের দাম প্রায় ডাবল বেড়েছে। তবুও কয়েকটা বই কিনব। তবে সমন্বয় করে দাম আরও কিছুটা কম রাখলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।
অন্য প্রকাশের বিক্রয়কর্মী শামা নিশাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, বইয়ের দাম ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে। নতুন বইয়ের দাম একটু বেশি। জনপ্রিয় ও সেলিব্রেটিদের বই বিক্রি বেশি হচ্ছে। এমনিতে আগের তুলনায় বই বিক্রি কিছুটা কমেছে।
শোভা প্রকাশের প্রকাশক মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাগজের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বই প্রকাশ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। কাগজের দাম বাড়ায় প্রতি বইয়ে আগের চেয়ে দুই-তিনগুণ দাম বাড়ছে। আমরা তবুও ভর্তুকি দিয়ে কিছুটা কম রাখার চেষ্টা করছি। সবকিছু প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও সব বই প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। বই বিক্রিও আগের তুলনায় কম হচ্ছে। এবারের মেলা নিয়ে আমরা চিন্তিত।
কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক এ কে নাছির আহমেদ সেলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু কাগজ নয় সবকিছুর দামই বেড়েছে। যারা নির্দিষ্ট বেতনে চাকরি করে তাদের জন্য জীবনধারণ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। বাকিরা মোটামুটি খাপ খাওয়াতে পারছে। সবমিলিয়ে বই বিক্রির অবস্থা তেমন একটা খারাপ না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বলেন, প্রডাকশন কস্টিং এত বাড়ছে অথচ দেখার কেউ নেই। যারা রাষ্ট্র চালায় তাদের ছেলেমেয়েরা কি স্কুলে পড়ে না! আমার মনে হয় পরিকল্পিতভাবে কাগজের দাম বাড়িয়ে সৃজনশীল প্রকাশনাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটি জাতিকে মেধা শূন্য করার নতুন ষড়যন্ত্র।
এইচআর/কেএ