কিছুতেই দালাল ও প্রতারকমুক্ত হতে পারছে না রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)। ফলে হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগীরা প্রতিদিনই দালাল-প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ভুক্তভোগী হচ্ছেন। চক্রটি নানা কৌশলে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে। কখনও জাতীয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে রোগীদের ভুলভাল বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয় বেসরকারি হাসপাতালে। এখানে আসা রোগীর স্বজনদের ধারণা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে এখানে দালালদের অবাধ বিচরণ।

সোমবার (১৫ মার্চ) হাসপাতালের কিছু রোগীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রতারকদের দেখে চেনার উপায় নেই। হাসপাতালে ঢোকা নতুন রোগীরাই তাদের মূল টার্গেট। এছাড়া পুরনো রোগীদেরও ছাড় দেয় না তারা। রোগীর সঙ্গে থাকা মানুষদের হাসপাতাল সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে ভালো চিকিৎসা না পাওয়ার ভয় দেখায়। পরে খোঁজ দেয় বেসরকারি হাসপাতালের।

জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীকে নিয়ে এসেছে তার পরিবার। জরুরি বিভাগের কাছে আসতেই দুজন ব্যক্তি তাদের নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। রোগীর পরিবার নিটোরের পরিবেশ সম্পর্কে জানায় তারা রক্ষা পান।

হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্বজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই পরশুদিন বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করে। পরে তাকে নিয়ে এখানে আসি। এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে কোনোভাবেই পুরুষ ওয়ার্ডে সিট পাচ্ছিলাম না। পরে এক লোক সিট ম্যানেজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলে তাকে ১৫০০ টাকা দিই। রাজধানীর বুকে সরকারি হাসপাতালের এমন অবস্থা হলে, মেনে নেওয়া যায় না। আমার ধারণা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে যোগসাজশ করে তারা এসব করছে।

অন্য এক রোগীর স্বজন জানান, জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় দুজন লোক আমাকে বলে, এখানে ভালো সেবা পাবেন না। বেডের অবস্থা ভালো না। পাবেন কি না, তারও গ্যারান্টি নেই। মেঝেতে থাকা লাগতে পারে। আপনাকে পাশের একটা ভালো হাসপাতালের খোঁজ দেই। ওখানে এসি রুমের বিছানা, ভালো সেবা পাবেন। ভালো ডাক্তার আছে, খরচও কম। কিন্তু তার কথায় কান দেইনি। আশেপাশের আরও কয়েকজনকে সে একই কথা বলে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, সে একজন দালাল। আমাদের ওই হাসপাতালে নিতে পারলে দুই হাজার টাকা কমিশন পেত।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত আসা মানুষদের প্রতারিত করতে সবসময় তৎপর চক্রটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হয়তো বিষয়টি জানে। তাই হাসপাতালের বিভিন্ন দেয়ালে লেখা, ‘দালাল-প্রতারক হইতে সাবধান।’ 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র র‍্যাবের অভিযানেই গত কয়েক বছরে শতাধিক দালালকে এই হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হয়। তবুও থেমে নেই এসব চক্রের তৎপরতা।

হাসপাতাল থেকে দালাল চক্রকে কেন দমন করা যাচ্ছে না বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে— এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে হাসপাতালে দায়িত্বরত কাউকে পাওয়া যায়নি। ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল গণি মোল্লাকে তার চেম্বারে পাওয়া যায়নি। তাকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি। পরে তার নিরাপত্তাকর্মী কালাম জানান, তিনি এখনও অফিসে আসেননি। 

হাসপাতালের উপপরিচালক অসুস্থ থাকায় ছুটিতে আছেন বলে জানা যায়। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক তালুকদার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে চক্ষু হাসপাতালে গেছেন বলে জানা যায়।

এমএইচএন/এইচকে/এমএআর/এমএমজে