অতিথিদের নিরাপত্তায় রাজধানীতে র্যাবের মহড়া
মানিক মিয়া এভিনিউতে র্যাবের মহড়া
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে নিরাপত্তা মহড়া চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত মানিক মিয়া এভিনিউতে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতেই অর্ধশতাধিক গাড়ি নিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউর দুই প্রান্ত প্রদক্ষিণ করেন র্যাব-২ এর সদস্যরা। প্রদক্ষিণ শেষে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় এর সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেন তারা। এসময় বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি করেন র্যাব সদস্যরা। শারীরিক তল্লাশির পাশাপাশি মাদক ও অস্ত্র শনাক্তে ব্যবহার করা হয় ডগ স্কোয়াড।
বিজ্ঞাপন
মহড়ায় অংশ নেওয়া র্যাব-২ কর্মকর্তারা জানান, ১৭ থেকে ২৬ মার্চ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা আমাদের দেশে আসবেন। তাদের ও উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত এ ধরনের চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞাপন
নিরাপত্তা মহড়া সম্পর্কে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজধানীতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে র্যাব। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা হামলা মোকাবিলায় র্যাব যে সক্ষম তারই একটি অনুশীলন হলো মানিক মিয়া এভিনিউতে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এটি কার্যকরভাবে আগামী ১০ দিন অব্যাহত থাকবে।
এর আগে দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে ১০ দিনের আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জলে-স্থলে এবং আকাশপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা জানিয়েছেন তিনি।
র্যাব ডিজি বলেন, আয়োজনকে কেন্দ্র করে র্যাবের বিভিন্ন চেকপোস্টে অন-সাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম ডিভাইস বসানো হবে। এর মাধ্যমে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের চেহারা, নাম ও পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। ১৭-২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী নিরাপত্তা দেবে র্যাব। কেউ যদি আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাতে চায়, তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।
উদযাপনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের হুমকি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো ধরনের হুমকি নেই। এছাড়া নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও নেই। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য আমরা এরইমধ্যে প্রস্তুতি সেরে ফেলেছি। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যুতে র্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও স্পেশাল ফোর্সেস নজরদারি করবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা ঘোষণা করেছে সরকার। ১৭ থেকে ২৬ মার্চ এসব অনুষ্ঠান পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
শুক্রবার (১২ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভবনে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠানমালা ঘোষণা করা হয়। ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানান, মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। অনুষ্ঠানমালায় প্রতিদিন পৃথক থিমভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিও-ভিজুয়াল এবং অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
দশ দিনের অনুষ্ঠানমালায় ১৭, ২২ এবং ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ১৭, ১৯, ২২, ২৪ এবং ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। এই পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানরা অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
১৭ মার্চের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, ১৯ মার্চ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী, ২৪ মার্চ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন।
এই পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে ৫০০ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া এই পাঁচদিনের অনুষ্ঠানসহ অন্য পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানমালায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হবে।
নাসের চৌধুরী আরও জানান, ১৭ মার্চের অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ১৮ মার্চ কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, ২০ মার্চ ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইউসেফ আহমেদ আল-ওথাইমিন, ২২ মার্চ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা, ২৪ মার্চ পোপ ফ্রান্সিস, ২৫ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং স্যু-কুয়েন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধু তাকাশি হায়াকাওয়ার ছেলে ওসামু হায়াকাওয়া বক্তব্য রাখবেন।
জেইউ/আরএইচ