আজ সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারছি
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘৭৫-এর পর তার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) স্বাধীনতার ঘোষণা, রেসকোর্সের ঐতিহাসিক বক্তব্য এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। তার ভাষণ প্রচারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। সবাইকে আজ ধন্যবাদ জানাই। সবার সহযোগিতায় আজ আমরা সেই সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করতে পেরেছি। আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।’
শুক্রবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার তৃতীয় দিনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাস বাঙালি জাতির জন্য স্মরণীয় মাস। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি হাজার বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম আবাসভূমি এনে দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। মিরপুরের সরকারি পিএইচ সেন্টারের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ইশারার ভাষায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার (১৯ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানের থিম ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’।
বিজ্ঞাপন
সভাপতির ভাষণে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৯৪৮ সালের এই মার্চ মাসের ১১ তারিখে তিনি (বঙ্গবন্ধু) মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম কারাগারে অন্তরীণ হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পাকিস্তানি শাসকদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’ এর সপ্তাহ আড়াই পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সমগ্র জাতিকে নির্দেশ দেন প্রতিরোধ যুদ্ধের। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক সম্পর্কের চিত্রও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে এবং আমরা পরস্পরকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে থাকি। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু এবং তিনি সবসময় বাংলাদেশের পাশে অবস্থান করেন। আমিও চেষ্টা করি সেই বন্ধুত্বের প্রতিদান দিতে। বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের যোগদান তার নিজের এবং শ্রীলঙ্কার জনগণের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রতিফলন।’
‘আমি আশা করি আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যকার এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রথম পর্বে আলোচনার পর থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, মুজিববর্ষের থিম সংগীত ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন এবং স্বাগত সম্ভাষণের পর আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আলোচনা পর্বে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি লাভরফের ধারণ করা শুভেচ্ছা বার্তা দেখানো হয়। পরে অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বক্তব্য দেন। এরপর অতিথিদের দেওয়া হয় ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা-স্মারক।
বঙ্গবন্ধু এখনও পথ দেখাচ্ছেন, ভবিষ্যতেও দেখাবেন
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ইতিহাসে কোনো রাজনীতিক বঙ্গবন্ধুর মতো প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেননি। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর মতো একসঙ্গে এত মানুষের ভালোবাসা এবং আস্থা অর্জনের সৌভাগ্য কোনো রাজনীতিকের হয়নি। এটা হয়েছে সমাজ ও মানুষ নিয়ে তার সঠিক জ্ঞান ও মূল্যায়নের ফলে।
‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন তিনভাগে ভাগ করা যায়। একটি সূত্রপাত, যেটা স্কুলের গণ্ডি থেকেই শুরু এবং কলকাতায় শিক্ষা জীবনে সক্রিয় হওয়া পর্যন্ত শেষ। দ্বিতীয়ত, কলকাতার শিক্ষাজীবনে রাজনৈতিক সক্রিয়তা থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পর্যন্ত। তৃতীয়ত, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন ও তার পরিচালনা।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্রগঠন ও পরিচালনা আমাদের এখনও পথ দেখাচ্ছে, ভবিষ্যতেও দেখাবে। বঙ্গবন্ধু জাতির মননে ও স্মৃতিতে চিরস্থায়ী প্রতীকে রূপ নিয়েছেন। এটা তার চিন্তা, একাগ্রতা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্বার্থক পরিশ্রমের ফল।’
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যা থাকছে
বন্ধুরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যের ওপর টাইটেল অ্যানিমেশন ভিডিও, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’ থিমের ওপর সিজি অ্যানিমেশন ভিডিও, কবিতা আবৃত্তি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ওপর লোকসংগীত পরিবেশনা, নৃত্যনাট্য, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান। এছাড়া থাকছে দুই প্রজন্মের শিল্পীদের মেলবন্ধনে মিশ্র মিউজিক পরিবেশনা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের ১০ দিনব্যাপী আয়োজনের সূচনা হয়েছে গত ১৭ মার্চ, জাতির জনকের জন্মদিনে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে তার সমাপ্তি হবে। প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরাও বাংলাদেশের এ উদযাপনের সঙ্গী হচ্ছেন। আয়োজনের প্রথম দিন বুধবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে যোগ দেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। এছাড়া নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী ২২ মার্চ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৪ মার্চ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ঢাকায় আসবেন।
এইউএ/এমএআর