বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বক্তব্য রাখছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে

বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। একইসঙ্গে তিনি ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন।

শুক্রবার (১৯ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনের আয়োজনের তৃতীয় দিনে অংশ নিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উভয়ের (শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ) মধ্যে সম্ভাবনা বিশেষ করে সামুদ্রিক সম্পদ, শিপিং ব্যবসা এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ দুই দেশকে সবসময় কাছাকাছি রেখেছে। বঙ্গোপসাগর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্লু ইকোনমির প্রস্তাব প্রতিনিয়ত আমাদের অনুপ্রাণিত করছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের পুরানো ইতিহাস টেনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার এই অঞ্চলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ইতিহাসবিদরা বলেন, খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে সমুদ্রপথে দুই অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। ১৯৭১ সালে নবগঠিত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথম কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা অন্যতম। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর।’

করোনা মহামারি এবং নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার মানুষের পক্ষে সংহতি জানাতে এখানে অংশগ্রহণ করেছেন বলেও জানান তিনি।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা শেষে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ ঐতিহাসিক মুহূর্ত পালন করছে। করোনার চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমি এখানে এসেছি। আমি খুব সম্মানিত বোধ করছি। আমি শ্রীলঙ্কার জনগণের হয়ে আপনাদের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছি।’

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করছেন— উল্লেখ করে রাজাপাকসে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু তার কন্যার হাত ধরে আজ বাংলাদেশ সুখী ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। এটা সম্ভব হয়েছে জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধার কারণে।’

বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই প্রাণপুরুষ, যিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। সেজন্য ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা এসেছে। তবে দুঃখের বিষয়, স্বাধীন হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যা করা হয়। দেশ হারান পিতাকে, কন্যারা হারান পিতা-মা-ভাই ও আত্মীয়দের।’

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার দুটি লাইন উদ্ধৃত করেন রাজাপাকসে। বলেন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী।’

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা শেষে সেখানে গাছের চারা রোপণ করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে

দুদিনের সফরে শুক্রবার সকালে ঢাকা পৌঁছান শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তার সঙ্গে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী, আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী, তাঁত ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী, গ্রামীণ গৃহায়ন ও গৃহ নির্মাণসামগ্রী শিল্প প্রতিমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আছে।

বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো এক অনন্য অভিজ্ঞতা

শুক্রবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দুদিনের সফরে ঢাকায় আসেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তিনি একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে সরাসরি জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী।

সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে টুইট করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। লেখেন, ‘যারা স্বাধীনতার জন্য, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মুক্ত, স্বাধীন আর গর্বিত বাংলাদেশের জন্য, পুরো বাঙালি জাতীর ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের স্মৃতিসৌধে এসে শ্রদ্ধা জানানো এক অনন্য অভিজ্ঞতা।’

শুক্রবার (১৯ মার্চ) বেলা ১১টায় তিনি সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন এবং একটি পারিজাত ফুল গাছের চারা রোপণ করেন।

অপর এক টুইট বার্তায় রাজাপাকসে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চাই, যাতে দুই দেশই পারস্পরিকভাবে লাভবান হতে পারে।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে দেশটির সঙ্গে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। সফরের প্রথম দিন বিকেলে রাজাপাকসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশেষ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়োজনে নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।

রাজাপাকসে শনিবার (২০ মার্চ) বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। ওইদিন বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে সন্ধ্যায় কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।

এনআই/এমএআর