হাড় ভেঙে গেছে আহমদ রফিকের, অপারেশন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ
ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক
ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি রাজধানীর গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কোমর ও মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন ৯২ বছর বয়সী এ ভাষাসৈনিক। তার উরুসন্ধির হাড় ভেঙে গেছে (ফ্রাকচার নেক অফ ফিমার লেফট)। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকরা অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন।
শনিবার (২০ মার্চ) রাজধানীর গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রফেসর খন্দকার আবদুল আওয়াল রিজভী তাকে দেখার পর ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানান। শুক্রবার (১৯ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে পড়ে গিয়ে কোমর ও মাথায় গুরুতর আঘাত পান আহমদ রফিক।
বিজ্ঞাপন
প্রফেসর খন্দকার আবদুল আওয়াল রিজভী বলেন, ওনার (আহমদ রফিক) বয়স ৯২ বছর চলছে। সব মিলিয়ে শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো না। ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, হার্টের অপারেশনসহ বেশ কিছু জটিল সমস্যা রয়েছে। ফলে তার জন্য কোমরের অপারেশন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তবে, মাথার আঘাত শিগগিরই সেরে যাবে।
সুস্থতা ফিরে পেতে কতদিন লাগতে পারে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বেশ কিছু পরীক্ষার পর অপারেশন করতে হবে। দুয়েক দিনের মধ্যে অপারেশন করা যাবে। এরপর আরও প্রায় সাত থেকে আট দিন চিকিৎসার মধ্যেই থাকতে হবে। সব মিলিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সংবাদ পেয়ে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের পরিচিত ও ঘনিষ্ঠজন সাইফুজ্জামান সাকন ও রাসেল নামের একজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সাইফুজ্জামান সাকন বলেন, স্যারের (আহমদ রফিক) বাসার বুয়া আমাকে দেড়টার দিকে ফোন দিয়ে বলে যে উনি পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি গিয়ে বাসার নিচে একজন চিকিৎসককে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করি।
তিনি জানান, গত ২০০৬ সালে স্যারের বউ মারা যাওয়ার পর থেকেই বাসায় একা থাকেন। কাজের বুয়া সবকিছুর দেখভাল করেন। গত প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিকের সঙ্গে তার পরিচয় ও বাসায় যাতায়াত। ওনার ছেলে মেয়ে কেউ নেই। আর স্বজনের অধিকাংশই দেশের বাইরে থাকেন। ফলে কয়েকজন সংস্কৃতি কর্মী ৯২ বছর বয়সী এ ভাষাসৈনিকের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
দুপুর ১২টার পর সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকের সঙ্গে বেশ সাবলীলভাবে কথা বলছেন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক। চিকিৎসা ব্যয়, কতদিন সময় লাগতে পারে এসব বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গেও আলাপ করেন দেশবরেণ্য গুণী এ প্রাবন্ধিক ও ভাষাসৈনিক। এছাড়া কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী ভক্ত রয়েছেন যারা তাকে দেখাশোনা করছেন। সবার সঙ্গে সাবলীলভাবে কথা বলছেন।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা ঢাকায় হলেও তা ছড়িয়ে যায় জেলা, উপজেলা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে। বিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক গড়ে ওঠে আন্দোলন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, চাটমোহর থেকে মেহেরপুর সব জায়গায় ভাষার আন্দোলনে জেগে ওঠে জনতা। যাদের নেতৃত্বে ভাষার আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক।
একে/ওএফ/এমএমজে