একটি দল বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টার্গেট গাড়ি খোঁজে। মিলে গেলে সময় ও সুযোগ বুঝে মুহূর্তেই নকল চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে স্টার্ট দেয়। ছুটে যায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, পূর্বাচল বা কাচঁপুর ব্রিজের দিকে। সামনে ও পেছন থেকে বাইক বা অন্য গাড়িতে চক্রের অন্য সদস্যরা নিরাপত্তা দেয়। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ বা মৌলভীবাজার ঘুরে চোরাই গাড়িটি চলে যায় সীমান্তের কোনো দুর্গম এলাকায়।

চোরাই প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস উদ্ধারসহ গাড়িচোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের(ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। গ্রেফতাররা হলেন- নূরুল হক, আব্দুল আলিম ওরফে ইমন, মো. হৃদয় পাঠান ওরফে উজ্জ্বল পাঠান ও এ এইচ রুবেল।

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানা ও হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম। গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত থেকে ৮টি চোরাইকৃত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, চক্রটির সদস্যরা বিআরটিএ-এর সীল ও স্বাক্ষর জাল করে গাড়ির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। মূল মালিকের নামের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করে নকল দলিল অথবা বিজ্ঞ আদালতের সই স্বাক্ষর সম্বলিত নিলামের নকল কাগজপত্র। সহজ-সরল নিরীহ লোকদের ভুল বুঝিয়ে তাদের কাছে অনেকটা কম দামে গাড়িটি বিক্রি করে দেয়।

সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আশরাফুল ইসলাম জনান, সম্প্রতি ঢাকায় মিরপুরের কাফরুল থানা, গুলশানের গুলশান থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় গারি চুরির ঘটনা ঘটে। কাফরুল থানার বিআরটিএ অফিসের রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে একটি প্রাইভেটকার চুরির ঘটনায় গত ২১ জানুয়ারি কাফরুল থানায় মামলা হয়।

উদ্ধার হওয়া গাড়ি

ওই মামলার তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম। তদন্তকালে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, গাড়িচোর চক্রের সদস্যরা কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে নকল চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে স্টার্ট দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৮ জানুয়ারি নূরুল হককে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে, গত ১২ মার্চ চক্রের অপর সদস্য আব্দুল আলিম ওরফে ইমনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

চলমান অভিযানে গত ১৬ মার্চ অভিযান চালিয়ে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানা এলাকা থেকে মো. হৃদয় পাঠান ওরফে উজ্জ্বল পাঠান ও এ এইচ রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, তারা বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে সংঘবদ্ধ গাড়ি চুরির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এ চক্রের ২/৩ জনের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে টার্গেট গাড়ি খুঁজতে থাকে। টার্গেটকৃত গাড়ি পেলে সময় ও সুযোগ বুঝে কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে নকল চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ছুটে যায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, পূর্বাচল বা কাচঁপুর ব্রিজের দিকে।

সামনে ও পেছনে বাইক বা অন্য কোনো গাড়িতে থাকে এ চক্রের বাকি সদস্যরা। সেখান থেকে তাদের একজন দক্ষ ড্রাইভার গাড়িটি পৌঁছে দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ বা মৌলভীবাজারের কোনো প্রভাবশালী চোরাই গাড়ি বিক্রির সিন্ডিকেটের কাছে। সেখান থেকে অন্য ড্রাইভার দ্বারা গাড়িটি চলে যায় সীমান্তের কোনো দুর্গম এলাকায়।

বিআরটিএ-এর সীল স্বাক্ষর জাল করে গাড়িটির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করা হয়, মূল মালিকের নামের সাথে মিল রেখে তৈরি করা হয় নকল দলিল অথবা আদালতের সই সম্বলিত নিলামের নকল কাগজপত্র। সহজ-সরল নিরীহ লোকদের ভুল বুঝিয়ে তাদের নিকট অনেকটা কম দামে গাড়িটি বিক্রি করে দেওয়া হয়।

এ চক্রের সদস্যরা কিছু কিছু গাড়ি দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল ও গাঁজা বহন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়।

জেইউ/এইচকে