রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সার্ভার থেকে ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করা গ্রাহকের প্রায় ৩০ হাজার নথি গায়েব হওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (৩০ এপ্রিল) রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে ১২ ধরনের নথিপত্র তলব করে দুদকের অনুসন্ধান টিম। 

সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

চিঠি সূত্রে জানা যায়, রাজউকের ম্যানেজমেন্ট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের মে মাস থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করা গ্রাহকের ৩০ হাজার নথি গায়েব হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র আগামী ১০ মে’র মধ্যে দুদকে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।

চিঠিতে যে ১২ ধরনের তথ্য-উপাত্ত তলব করা হয়েছে

রাজউকের সফটওয়্যার কার্যক্রম পরিচালনা ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, পদবি, ঠিকানা ও পরিচয়পত্রের কপি;  নথি গায়েব হওয়ার পর থেকে রাজউকের নেওয়া পদক্ষেপ; বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার লিমিটেডের সঙ্গে রাজউকের চুক্তির শর্তানুযায়ী টেকনো হেভেন লিমিটেডকে অপারেশন এবং সাপোর্ট মেইনটেনেন্সর দায়িত্ব দেওয়ার আগে বিডিসিসিএলের কাছে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল কি না; বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সফটওয়্যার কোয়ালিটি টেস্টিং সেন্টার থেকে কোয়ালিটি টেস্ট করা হয়েছিল কি না; গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সিপি সফটওয়্যারটির ইউজার অ্যান্ড এবং অ্যাডমিন, ডাটাবেজ এন্ড কারা ব্যবহার করেছে তাদের নামের তালিকা; সিপি সফটওয়্যারটি প্রথম কবে অনুমোদন করা হয়, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কতগুলো নথি অনুমোদন করা হয় তার সংখ্যা, নথিগুলোর ব্যাকআপ রাখা হয়েছিল ও নথিগুলো কোনো হার্ডকপিতে সংরক্ষণ করা হয়েছিল কি না; সফটওয়্যারটি চালুর আগে ইউজার একসেপটেন্স টেস্ট ও প্যানাট্রেশন টেস্টিং করা হয়েছিল কি না; সফটওয়্যার তৈরির আগে দরপত্র সংক্রান্ত সব নথিপত্র এবং এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, পদবি, ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর রাজউকের সার্ভার হ্যাকড হয় এবং ২১ ডিসেম্বর সার্ভার উদ্ধার করা হয়। সার্ভার উদ্ধার করে দেখা যায় তাতে কোনো নথি নেই। সার্ভারে ২০১৯ সালের মে মাস থেকে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নগর পরিকল্পনা শাখার প্রায় ৮ হাজার ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন ও ইমারত নির্মাণ শাখার নকশা অনুমোদন সংক্রান্ত ২২ হাজারসহ মোট ৩০ হাজার নথি ছিল, যা গায়েব হয়ে যায়। যারা ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও ইমারতের নকশা অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ সহকারে আবেদন জমা দিয়েছিলেন, তাদের আবার নতুন করে জমা দিতে হবে। এতে করে তারা আর্থিক ক্ষতিসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হবেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, নথিপত্র গায়েব হওয়ার ঘটনা সাধারণ কোনো ঘটনা মনে হয় না। এটি একটি সাবোট্যাজ হতে পারে। রাজউকের সার্ভার দেখভাল করে টেকনো হেভেন লিমিটেড। এসব নথি গায়েবের সঙ্গে রাজউক ও টেকনো হেভেনের কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত থাকতে পারেন।

জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি রাজউকের সার্ভার থেকে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজউকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই ঘটনা অনুসন্ধানে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের একটি সুয়োমটো রুল আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক ৩ সদস্যের একটি টিম গঠন করেন। টিমের সদস্যরা হলেন- সংস্থাটির পরিচালক রাজিব হাসান, উপপরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত ও সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান।

আরএম/জেডএস