নারীর গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরূপণ ও স্বীকৃতি দেওয়া, সরকারিভাবে ডে কেয়ার সেন্টার, কর্মজীবী নারী হোস্টেল নির্মাণ এবং নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম।

সোমবার (২৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম মনে করে, নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করা এবং পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে সমাজে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এজন্য রাষ্ট্রকে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে। পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে নারীর শ্রমের অবদানের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে।

তারা বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো কাজ নেই, যার ফলাফল নেই। কাজ সেটা ছোট হোক বা বড় হোক তার প্রভাব পড়বেই। কিন্তু এমন অনেক কাজ আছে যে কাজের ফলাফল ছাড়া দৈনন্দিন জীবন অচল হয়ে পড়ে। মানুষের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক জীবন বিকশিত হওয়া তো দূরের কথা, টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু সে কাজ হলো এমন ধরনের কাজ, যার কোনো স্বীকৃতি নেই।

নারীর কাজের অর্থনৈতিক অবদান প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথমত, মজুরির বিনিময়ে কাজ এবং টাকা উপার্জনের জন্য নিয়োজিত কাজ, যা জিডিপির হিসাবে যুক্ত হয়। দ্বিতীয়ত, নারীর মজুরিবিহীন কিছু পারিবারিক কাজ যেমন– হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালন করে বিক্রি করা ইত্যাদি, এর আর্থিক মূল্য জিডিপিতে যুক্ত হয়। তৃতীয়ত, নারীর গৃহস্থালি কাজ, যার বাজার মূল্য বা বিনিময় মূল্য নেই, যা বাজারজাত করা যায় না তা জিডিপিতে যুক্ত হয় না, এমনকি শ্রমশক্তি হিসেবেও গণ্য হয় না।

পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে নারীর গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি নেই বলে পরিবারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গৃহিণী নারীদের অংশগ্রহণ তার স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যরা খুব একটা গ্রহণ করেন না। বিশ্বের অনেক দেশেই বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমান সম্পত্তি ভাগ করার আইন আছে। অর্থাৎ ২০ বছর সংসার করার পর যদি কোনো স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাহলে এই ২০ বছরে সৃষ্ট মোট সম্পত্তি সমান ভাগ হবে। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো সংসার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নারীর শারীরিক-মানসিক শ্রম থাকা সত্ত্বেও নারীরা স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর সম্পত্তির প্রায় কোনো অংশ‍ই পান না। অথচ বিয়ের পর ওই সংসারের যা কিছু সম্পদ-সম্পত্তি অর্জিত হয়েছে, গৃহিণী নারীরও সেখানে পরিপূরক ভূমিকা আছে। গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য নিরূপণ ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থাকলে পরিবারের ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হতো। পারিবারিক নির্যাতনও কমতো।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু, সাধারণ সম্পাদক রুখশানা আফরোজ আশা, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের ঢাকা নগর শাখার সভাপতি সেলিনা ইয়াসমিন কনা, সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফা বেগম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খাদিজা রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুস্মিতা মরিয়ম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ প্রমুখ।

/এমএইচএন/এসএসএইচ/