করোনার মধ্যেই চলছে নেপালের শিক্ষা কার্যক্রম
সকালে সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাঠমান্ডুতে চোখে পড়ে স্কুলগামী কোমলমতি শিশুদের। ব্যাগ ঝুলিয়ে কেউ একা মৃদু পায়ে হেঁটে চলছেন, কেউ আবার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে গল্প করতে করতে। আবার অনেক শিক্ষার্থীকে অভিভাবকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিচ্ছেন।
করোনার তাণ্ডবে বাংলাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। নেপালেও বন্ধ ছিল কয়েক মাস। প্রায় মাস দু’য়েক আগে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত শুরু করেছেন। কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রোজবার্ড স্কুল। ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের মূল ফটকে দেখা গেল, বাইরের দর্শনার্থী প্রবেশ নিষেধ। স্কুলে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, স্টাফ সবাইকে স্যানিটাইজ করতে ও মাস্ক পরীক্ষা করতেও দেখা গেল। ত্রিদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সংবাদ কাভার করতে বাংলাদেশ থেকে আসায় বিশেষভাবে অনুমতি পাওয়া গেল স্কুলের ভেতরে যাওয়ার।
বিজ্ঞাপন
প্রাইভেট স্কুল হলেও আয়তনে বেশ বড়। ফুটসাল আকৃতির টার্ফ রয়েছে, আছে ছোট বাস্কেটবল গ্রাউন্ডও। অফ পিরিয়ডে কয়েকজনকে খেলতেও দেখা গেল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে ক্লাস।
স্কুলের একাডেমিক প্রোগ্রাম ও অ্যাক্টিভিটিস সেকশনের ব্যবস্থাপক বেনী বাহাদুর কারকে স্কুলের করোনা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা বেঞ্চের পরিবর্তে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা চেয়ার ব্যবস্থা করেছি। যাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হয়। এর পাশাপাশি ডাক্তাররা সপ্তাহ খানেক পর পর এসে দেখে যান। নতুন করে যাত্রা শুরুর পর এখন পর্যন্ত আমাদের স্কুলে কারও করোনা শনাক্ত হয়নি।’
বাংলাদেশে করোনাকালীন স্কুল বন্ধ থাকলেও পূর্ণ বেতন দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। অভিভাবকদের কাছ থেকে পূর্ণ বেতন নেওয়া হলেও অনেক স্কুলের শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে বেতনের অর্ধেক বা এরও কম টাকা। নেপালে হয়েছে এর উল্টোটা, ‘আমাদের স্কুল করোনাকালীন ৬০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করেছি। অভিভাবকদের ৪০ শতাংশ ফি দিতে হয়েছে মাত্র। শিক্ষকদের বেসিক বেতন (৩৮ হাজার রুপি) ও কিছু ভাতা নিয়মিত পেয়েছেন’ বলেন কারকে।
বিজ্ঞাপন
নেপালের প্রথম সারির স্কুলের শিক্ষকরা অর্ধলাখ নেপালী রুপির বেশি সম্মানি পান। বাংলাদেশে যেটা খুবই কম। শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের বেতন কাঠামো প্রসঙ্গে রোজবার্ড স্কুলের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্নাতকের পর ভালো যোগ্যতা সম্পন্ন কেউ থাকলে আমরা নিজস্ব পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যাসোসিয়েট টিচিং স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেই। এরপর দুই বছরের মধ্যে সরকারি পরীক্ষা দিয়ে তাদের উত্তীর্ণ হতে হয়। সরকারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পূর্ণ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হয়। তখন ৩৮ হাজার রুপি বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হয় তাদের’।
সরকারি নির্দেশনা ৩৮ হাজার রুপি হলেও অনেক স্কুল এর চেয়ে বেশি সম্মানিও দেবে, আবার কোনো স্কুল কমও দিয়ে থাকে। রোজবার্ড স্কুল নারী শিক্ষক ও স্টাফদের জন্য ব্রেস্টফিডিং রুম করার পরিকল্পনা করছে। যাতে বাচ্চারা মায়ের আদর পায়, পাশাপাশি মা নিশ্চিন্ত মনে কাজ শেষ করতে পারেন।
করোনাকালীন বাংলাদেশে অনেক স্কুল-কলেজ অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে। অনলাইন কার্যক্রমের জন্য আধুনিক মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ প্রয়োজন। এর অভাবে অনেকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে ছিল। অনেক অভিভাবক সেই চাহিদা না মেটাতে পেরে আত্মহত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে। নেপালে এ রকম ঘটনা ঘটেনি বলে জানালেন তিনি, ‘অনলাইন কার্যক্রম শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবার জন্যই নতুন। আমাদের স্কুলের কার্যক্রম ভালোই চলেছে। মাস খানেকের মধ্যে শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। পরীক্ষার মূল্যায়নও আমরা এভাবে করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি। আমাদের স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের ডিভাইস সরবরাহ করতে হয়নি। অনেক স্কুল করেছে।’
বেনী বাহাদুর কারকে বলেন, ‘রোজবার্ড স্কুলটি ইংরেজি ভার্সন। কাঠমান্ডুর উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই এখানে পড়াশোনা করে। করোনার জন্য অন্য স্কুলে ঝরে পড়ার শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলেও রোজবার্ডে কিছুটা কম, শহরের মধ্যবিত্ত পরিবার সন্তানরা আমাদের এখানে পড়াশোনা করে। করোনার জন্য অনেক অভিভাবকের আয় কমে গেছে। এজন্য বাচ্চাকে স্কুল পাঠাতে পারছে না। আমাদের স্কুলে সেই হার শতকরা একের নিচে হলেও অন্য স্কুলগুলোতো কিছুটা বেশিই।’
স্কুল-কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত বিলম্বে খুলবে ঝরে পড়ার হার আরও বাড়বে।
এজেড/এসএম