ট্রেনে ওঠার ভিড়/ ছবি- সুমন শেখ

প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ট্রেনের টিকিট ইস্যুর নতুন নিয়ম করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-পরিচালক (টিসি) মো. নাহিদ হাসান খানের সই করা এক নির্দেশনাপত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) থেকে টিকিট ইস্যুর নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ইস্যু পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে। 

নতুন নিয়মে আন্তঃনগর ট্রেনের মোট আসনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে। বাকি আসন ফাঁকা রেখেই চলবে ট্রেন। টিকিট বিক্রি হবে অনলাইন, মোবাইল অ্যাপ ও কাউন্টারে। সকাল ৮টা থেকে অগ্রীম ব্যবস্থাপনায় টিকিট ইস্যু করা যাবে। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) সরদার শাহাদাত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে দুই সপ্তাহের জন্য সরকার ১৮টি নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে গণপরিবহনের ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা রয়েছে। আগাম টিকিট বিক্রি হওয়ায় ট্রেনে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর করতে একটু জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তাই এবার নতুন এই নির্দেশনা দেওয়া হলো। 

রেলওয়ের নির্দেশনাপত্রে জানানো হয়েছে, আন্তঃনগর ট্রেনে ক্যাটারিং সেবা প্রদান ও ট্রেনে রাত্রীকালীন বেডিং সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করা হবে। টিকিট ইস্যু ও স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের নিয়মাবলী অপরিবর্তিত থাকবে।

১ সিট ফাঁকা রেখে বসার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না ছবি: সুমন শেখ

এদিকে ট্রেনে ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রেখে যাত্রার নির্দেশনার প্রথম দিন মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) এ নির্দেশনা পরিপালিত হয়নি রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে। এদিন অধিকাংশ যাত্রীকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ করতে দেখা যায়নি।    

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) সরদার শাহাদাত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত আগাম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। আমরা নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করছি। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আগে বিক্রিত টিকিট ফেরত না এলে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা পুরো বাস্তবায়ন করা যাবে না। ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়নে কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে।

যাত্রীদের অনেকেই মাস্ক পরছেন না বলে দেখা গেছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ সারোয়ার বলেন, কেউ যদি মাস্ক পরার অভিনয় করে তাহলে আমরা কি করতে পারি? আমাদের চোখের সামনে দিয়ে কেউ মাস্ক ছাড়া ট্রেনে উঠতে পারছেন না। আশা করবো সবাই সচেতনতার পরিচয় দেবেন।

মাস্ক ব্যবহারে অনাগ্রহী অধিকাংশ যাত্রী

এদিকে সম্প্রতি দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। সবমিলিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৪৬ জনে। একদিনে মৃত্যুর হিসাবে গত সাত মাসে এটিই সর্বোচ্চ প্রাণহানি। এর আগে, গত বছরের ২৬ আগস্ট করোনায় ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। 

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৫৮ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ১১ হাজার ২৯৫ জনে। এটিই করোনায় দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে, এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছিল দুদিন আগে গত ২৯ মার্চ। সেদিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ১৮১ জন। বুধবার (৩১ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

পিএসডি/এইচকে