ছুটির দিনে প্রাণ ফিরে পেল বইমেলা/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

এবারের বইমেলা নিয়ে আবারও আসতে যাচ্ছে নতুন সিদ্ধান্ত। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে ১৮ জন প্রকাশক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে বৈঠক করে মেলার সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব জানান। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নতুন সিদ্ধান্ত জানাতে পারে।

বৈঠক সূত্র জানায়, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ পূর্বের নীতিমালা অনুযায়ী ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং অন্যান্য দিনগুলোতে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চালু রাখার প্রস্তাব করেন। এ সময় উপস্থিত প্রকাশকদের মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দেয়। তখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘আপনারা সবাই সম্মিলিতভাবে সুনির্দিষ্ট একটি প্রস্তাব জানান’। এ সময় প্রকাশকরা বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলার চালু রাখা প্রস্তাব করেন। তবে এই প্রস্তাবনার বিষয়ে হাবীবুল্লাহ সিরাজী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকাশকদের জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

যদিও শুক্রবার (২ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তাম্রলিপি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী তরিকুল ইসলাম রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা পূর্বের নীতিমালা অনুযায়ী মেলা পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে বাংলা একাডেমি থেকে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।’

বৈঠকে উপস্থিত চারুলিপি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা সম্মিলিতভাবে বিকেল ৪টা থেকে ৮টা পর্যন্ত মেলা পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি, আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে বাংলা একাডেমি থেকে এই বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত পাব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘আমরা প্রকাশকদের দাবির কথা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেই অনুযায়ী মেলা চলবে।’

গত কয়েকদিন নিষ্প্রাণ থাকলে ছুটির দিনে প্রাণ ফিরে পেল বইমেলা

করোনার কারণে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে এ বছর ১৮ মার্চ মেলা শুরু হয়। সেদিন বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মেলার দ্বিতীয় দিন থেকে ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে মেলা। অন্যান্য দিনগুলোতে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলে।

কিন্তু দেশে করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ মার্চ ভাইরাসটি প্রতিরোধে ১৮টি নির্দেশনা দেয় সরকার। নির্দেশনায় সবধরনের মেলা ও জন সমাবেশের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। এরপর বইমেলা বন্ধ যেতে পারে- এমন গুঞ্জনও ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৩১ মার্চ) বইমেলার সময়সূচি কমিয়ে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করা হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বইমেলা বন্ধের সুপারিশ করা হয়।

শুক্রবার ছিল মেলার ১৬তম দিন। বেলা ১১টায় মেলা শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির এ দিনটিতে মেলায় মানুষের ঢল নামে। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বইমেলা। বেলা ১১টায় মেলার গেট খোলার পর থেকে দর্শনার্থী ও পাঠকের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে। তবে দুপুরের পর থেকে বাড়তে থাকে মানুষের উপস্থিতি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই জনারণ্যে পরিণত হয় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি পাল্টে দেয় মেলার রূপ। বইপ্রেমীদের আনাগোনা আর ঘোরাফেরায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে মেলায় প্রবেশে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বেশ কড়াকড়ি থাকলেও মাঠে প্রবেশের পর সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানায় আগ্রহী ছিলেন না অনেকেই।

এএইচআর/এফআর