জাতীয় সংসদ/ ফাইল ছবি

আইনের আওতায় আসছে ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রম। দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রম পরিচালনা এবং পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণে দেশে নতুন আইন হচ্ছে। শনিবার (৩ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) বিল ২০২১’ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক মাসের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

নতুন এ বিল অনুযায়ী, কোনো ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড পরিচালনার জন্য সরকারের নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ থেকে সনদ গ্রহণ করতে হবে। আইনটি কার্যকর হওয়ার তিন মাসের মধ্যে বিদ্যমান ট্যুর অপারেটরগুলোকে নিবন্ধন সনদ নিতে হবে।

বিলটির ওপর আপত্তি তোলেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি আইনের বিরোধিতা করে বলেন, ট্যুর অপারেশন অব বাংলাদেশ (টুয়াব) দেশের পর্যটন কার্যক্রমকে একটি জায়গায় নিয়ে এসেছে। তাদের কার্যক্রম ব্যাহত করতে এই আইন করা হয়েছে। টুয়াবকে পাশ কাটিয়ে আইনটি করা হয়েছে। টুয়াবকে এখন নিবন্ধনের জন্য বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতে হবে।

তিনি বলেন, আইন করার অর্থ হলো দুর্নীতির একটি জায়গা খোলা। আইন করা মানে কোনো কিছুর গতি কমিয়ে দেওয়া। দেশ নীতি ও নৈতিকতার মধ্যে চললে এত আইন প্রণয়নের প্রয়োজন পড়ে না।

জবাবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রমে সহায়তা ও একটি বিধিবদ্ধ বিধানের আওতায় আনতে এই আইন করা হয়েছে। এই আইনে তাদের কার্যক্রম কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হবে না। মহামারির মধ্যেও পর্যটন করপোরেশন যতদূর সম্ভব পর্যটন কার্যক্রম প্রমোট করেছে। জাতির পিতা পর্যটন করপোরেশন গঠন করেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্যুরিজম বোর্ড গঠন করেছেন। এই আইনে ওই করপোরেশন ও বোর্ড গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে। টোয়াবসহ স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের সুবিধার জন্য এই আইনটি হচ্ছে বলেও প্রতিমন্ত্রী জানান।

প্রস্তাবিত আইনের বিধান মতে, নিবন্ধন সনদ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সেবা সংশ্লিষ্ট আবাসন, আহার বা আপ্যায়ন, পরিবহন, পর্যটন আকর্ষণ সংশ্লিষ্ট স্থান পরিদর্শন, পরিভ্রমণ সেবা বা অন্যান্য পর্যটন সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করে দলভিত্তিক বা একক ট্যুর আয়োজন ও পরিচালনা এবং ট্যুর গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। এছাড়া বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।

প্রস্তাবিত আইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে তার জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল ও দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এই আইনের অপরাধ মোবাইল কোর্টের (ভ্রাম্যমাণ আদালত) মাধ্যমে বিচার করা যাবে।

উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, পর্যটন খাত একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। বর্তমানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্যুর অপারেটররা অন্তর্মুখী ও বিদেশগামী ট্যুর পরিচালনা করে থাকে। এসব ট্যুর অপারেটরদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দেশে প্রচলিত কোনো আইন না থাকায় অনেক সময় পর্যটকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হন। দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত ট্যুর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রম আইনের আওতায় পরিচালনা এবং পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আইনটি অনুমোদিত হলে পর্যটকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রাপ্তি সহজ হবে। পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণসহ পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে আইনের আওতায় পরিচালনা করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

এইউএ/এসএসএইচ