সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ব্যাংকার আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী

হুমকি আর ভয়ভীতির মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন করে ব্যাংকার আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীকে আত্মহত্যার জন্য বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী।

রোববার (১১ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় স্বামীর আত্মহননের নেপথ্যে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারও দাবি করেন তিনি।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবদুল মোরশেদ চৌধুরী গত বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর হিলভিউ আবাসিক এলাকার ‘নাহার ভিলা’ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, তার স্বামীর আত্মহত্যার পর বাসায় একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। সেখানে মোরশেদ লিখেছেন, ‘আর পারছি না, সত্যি আর নিতে পারছি না। প্রতিদিন একবার করে মরছি। কিছু লোকের অমানুষিক প্রেশার আমি আর নিতে পারছি না। প্লিজ, সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার জুমকে (মেয়ে) সবাই দেখে রেখ। আল্লাহ হাফেজ।’

কন্যা আর স্বজনের কথা না ভেবে কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন আমার স্বামী— প্রশ্ন রাখেন স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমার স্বামীর ফুফাত ভাই জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, পারভেজ ইকবাল চৌধুরী ও পাঁচলাইশের সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দীনের কাছে থেকে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যবসাসূত্রে ২৫ কোটি টাকা নেয় মোরশেদ। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এর বিপরীতে লভ্যাংশসহ তাদের পরিশোধ করা হয় ৩৮ কোটি টাকা। এরপর থেকে তারা আরও টাকা দাবি করতে থাকে। এজন্য তারা আমার স্বামীকে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে চাপ এবং হুমকি–ধমকি দিতে শুরু করে। ২০১৮ সালের মে মাসে আমার স্বামীকে সৈয়দ সাকিব নাইম উদ্দিনের পাঁচলাইশের এম এম টাওয়ারে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আরও ১২ কোটি টাকা বাড়তি পায় উল্লেখ করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়। মূলত ব্যবসায় তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ সুদে-আসলে ফেরত পাওয়ার পরও টাকা দাবি করে আসছিল।’

পরিবারের অভিযোগ, আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীকে আত্মহত্যার জন্য বাধ্য করা হয়েছে 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমার স্বামীকে হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ছাড়াও বাসায় হামলা, আমাকে নির্যাতন, কন্যাকে অপহরণ এবং আমার স্বামীকে অনেকবার খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাদের চাহিদা মতো টাকা না দেওয়ায়, তাদের অমানবিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ বেছে নেন।’

‘আত্মহত্যার আগের দিন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রাসেল মোবাইল ফোনে আমার স্বামীকে জীবননাশের হুমকি দেন’— বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন ইশরাত। বলেন, ‘প্রতিপক্ষের অর্থবিত্ত আর রাজনৈতিক প্রভাবের মুখে আমরা আসহায়। ফলে আমরা নিজেদের জীবন নিয়ে চরম শঙ্কিত।’

ওই ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল ইশরাত জাহান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা করেন। মামলায় পারভেজ ইকবাল, জাবেদ ইকবাল, সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দিন, যুবলীগ নেতা রাসেল ও অজ্ঞাত সাত/আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

কেএম/এমএআর/