ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ লাইন

প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচনে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) ২৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয়। ভোট চলাকালীন খুলনার চালনায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর মৃত্যু হলে সেখানে মেয়র পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এটি ছাড়া বাকি ২৩টি পৌরসভায় ভোটের ফল প্রকাশ করে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে বিজয়ীর নামও। তবে সম্প্রতি হওয়া নির্বাচনগুলোর তুলনায় এ পৌর নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া তথ্যও বলছে একই কথা।

ইসির দেয়া তথ্যমতে, ২৩ পৌরসভায় গড়ে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ছয় লাখ ১২ হাজার ৫৭০ জন। ভোট দিয়েছেন তিন লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৭ জন। ৭৫৮ জনের ভোট বাতিল হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসির যুগ্ম-সচিব এস এম আসাদুজ্জামান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভায়। সেখানে শতকরা ৮৫ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডতে। সেখানে মাত্র ১৪ হাজার ১৮৮ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোট বাতিল হয়েছে ৩৯টি। ভোট পড়েছে ৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

গত ২২ নভেম্বর প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। গাজীপুরের শ্রীপুরে একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যু হলে ওই পৌরসভার ভোট স্থগিত করে ইসি। অপরদিকে, ভোটগ্রহণ চলাকালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের খানের মৃত্যুর কারণে খুলনার চালনা পৌরসভায় মেয়র পদের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করা হয়। ২৩টি পৌরসভায় ফলাফলে মধ্যে ১৮টিতে আওয়ামী লীগ, তিনটিতে স্বতন্ত্র এবং দুটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

প্রথম ধাপে নির্বাচন হওয়া পৌরসভাগুলো হচ্ছে- ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, কুষ্টিয়ার খোকসা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনার চালনা, বরগুনার বেতাগী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোনার মদন, মানিকগঞ্জ, ঢাকার ধামরাই, সুনামগঞ্জের দিরাই, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড।

ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লাইন

আওয়ামী লীগ থেকে জয়ী পৌর মেয়র

কুড়িগ্রাম পৌরসভায় মো. কাজিউল ইসলাম; বরগুনার বেতাগী পৌরসভায় এ বি এম গোলাম কবির; বরিশালের বাকেরগঞ্জে মো. লোকমান হোসেন ডাকুয়া, উজিরপুর পৌরসভায় গিয়াসউদ্দিন ব্যাপারী; চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম মালিক; মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী; সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বিশ্বজিৎ রায়; মানিকগঞ্জ পৌরসভায় মো. রমজান আলী; ধামরাই পৌরসভায় গোলাম কবির; সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মনির আক্তার খান তরু লোদী; পঞ্চগড় পৌরসভায় জাকিয়া খাতুন; চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভায় বদিউল আলম; রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভায় আহসানুল হক ওরফে টুটুল চৌধুরী; কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভায় তারিকুল ইসলাম; ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভায় ইকবাল হোসেন; নেত্রকোনার মদন পৌরসভায় সাইফুল ইসলাম জয়ী হয়েছেন; পাবনার চাটমোহর পৌরসভায় সাখাওয়াত হোসেন এবং রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভায় জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্বাস আলী।

বিএনপি থেকে যারা জয়ী হয়েছেন

রাজশাহীর পুঠিয়ায় আল মামুন এবং হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী এম এফ আহমেদ অলি। 

জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভায় নারিকেল গাছ প্রতীকে মো. মাহামুদ আলম লিটন; পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভা মো. আনোয়ার হাওলাদার এবং ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকরামুল হক। তিনি আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।

এদিকে, দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৬ জানুয়ারি ৬১টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এবং ৩২টি পৌরসভায় ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। গত ৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৬১টি পৌরসভার নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ২০ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর।

ইসি জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে পৌরসভার সংখ্যা ৩২৯টি। নির্বাচন উপযোগী পৌরসভার সংখ্যা ২৫৯টি। আগামী বছরের জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হবে ১১টি পৌরসভার। ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়াদ শেষ হবে ১৮৫ পৌরসভার। এরমধ্যে ১ ও ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়াদ শেষ হবে চারটি, ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়াদ শেষ হবে ৪৬টি এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়াদ শেষ হবে ১৩৩ পৌরসভার। মার্চে শেষ হবে ২৮ পৌরসভার মেয়াদ। এপ্রিল থেকে নভেম্বরে শেষ হবে ৩০টির মেয়াদ।

এসআর/এফআর