মহাসড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য
করোনা রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনে মহাসড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য দেখা গেছে। ছুটির দিন হলেও অনেককে অফিসের অজুহাতে চেকপোস্ট থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। তবে অন্যদিনের তুলনায় আজ পথচারীর সংখ্যা কম।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর উত্তরা রাজলক্ষ্মী মোড় ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দ্রুত গতিতে ছুটছে ব্যক্তিগত গাড়ি। দুই-চারটি অ্যাম্বুলেন্স ও মালবাহী গাড়িও ফাঁকে ফাঁকে চলাচল করছে। দুই-চারটি রিকশাও দেখা গেছে। এছাড়া ওষুধ, জরুরি পণ্য, খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের গাড়িও দেখা গেছে মহাসড়কে। তবে গাড়ির চাপে কোথাও যানজট সৃষ্টি হয়নি।
বিজ্ঞাপন
রাজলক্ষ্মী মোড়ে চেকপোস্টে দেখা যায়, প্রায় প্রতি মিনিটেই অন্তত একটি ব্যক্তিগত গাড়ি চেকপোস্ট পার হওয়ার জন্য আসছে। এগুলোর অধিকাংশই অফিসের অজুহাতে চেকপোস্ট থেকে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৯০ ভাগ চালকই গার্মেন্টস ও বায়িং হাউজ অফিসের ঠিকানা দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের দেখাচ্ছেন। দুই-চারজন অসুস্থতার কথা বলেও চেকপোস্ট অতিক্রম করেছেন।
উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কাসেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অধিকাংশ মানুষই অফিসের কথা বলছেন। এ এলাকায় গার্মেন্টস ও বায়িং হাউজ বেশি হওয়ায় এসব গাড়ি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যারা পরিচয়পত্র ও মুভমেন্ট পাশ দেখাতে পারছেন কেবল তাদেরই যেতে দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই পরিচয়পত্র দেখাতে পারছেন না। তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি জানান, সকাল থেকে গাড়ির সংখ্যা কম। সবাই প্রয়োজনেই বের হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে।
অন্যদিকে উত্তরা ৩ ও ৫ নং সেক্টর ঘুরে কোনো চেকপোস্ট দেখা যায়নি। সেক্টরের প্রধান প্রধান ফটক দিয়ে গাড়ি প্রবেশ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পথচারীরা নিজেদের মতো করে চলাফেরা করছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেও পড়তে হচ্ছে না। রিকশাও চলতে দেখা গেছে। সেক্টরের মধ্যে প্রধান সড়কের পাশে মুদি ও সবজির দোকান খোলা থাকতে দেখা গেছে। অনেকেই কেনাকেটা করে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
করোনার সংক্রমণ রুখতে সরকার দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। ১৪ এপ্রিল থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। এর আগে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেওয়া হয় শপিংমলও। এতে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়তে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে দেশে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার’।
এরপর গত ৯ এপ্রিল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।
এই বিধিনিষেধ আরোপের পর চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন, তারা মুভমেন্ট পাস দেখাতে পারলেই ছাড়া পেয়েছেন। আর যারা যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারেননি, তাদের কাউকে মামলা আবার কাউকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিধিনিষেধের মধ্যে যাদের একান্তই বাইরে যাওয়া প্রয়োজন হবে তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে movementpass.police.gov.bd ওয়েবসাইট ও অ্যাপসের উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
একে/এসএসএইচ