প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৮০৯ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪২ জন ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১১ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৭ জন। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে উপহারের টিকাসহ দেশে মোট টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। ওই হিসাবে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ শেষে টিকার মজুদ রইল মাত্র ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ডোজ।

শনিবার (১৭ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২ লাখ ২১ হাজার ৬১৬ জন টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৩ ও নারী ৭৮ হাজার ৩১৩ জন। আর প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১২ হাজার ১৫৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৬৬৬ ও নারী ৪ হাজার ৪৯১ জন।

এ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩ জন। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪৭ জন। ঢাকা বিভাগে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৯ ও ঢাকা মহানগরীতে নিয়েছেন ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯০৯ জন।

ময়মনসিংহ বিভাগে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫৬ হাজার ৫৫৬ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪২৫ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৮৯০ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১১ লাখ ৫৩ হাজার ১৬ জন। রাজশাহী বিভাগে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার ২৯৭ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৩০ জন। রংপুর বিভাগে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৩৮১ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪১ জন। খুলনা বিভাগে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৭ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৪ জন। বরিশাল বিভাগে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৯ হাজার ৬৯৮ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৪ জন এবং সিলেট বিভাগে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৮৭ হাজার ৫৫ জন ও প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৩৩ জন।

মে মাসেই দেশে টিকা সংকটের শঙ্কা
টিকা সরবরাহের অনিশ্চয়তায় প্রয়োগের কার্যক্রম নিশ্চিত ঝুঁকির দিকেই এগুচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, যে টিকা আছে এপ্রিল মাসে কোনো সমস্যা হবে না। তবে মে মাসের মধ্যে টিকা না এলে টিকা কার্যক্রম নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তবে, সেরাম ছাড়াও রাশিয়া ও চীনসহ বিকল্প সব জায়গা থেকে টিকা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুরু থেকেই বিকল্প না রেখে একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল থাকার কারণে বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশা করা যায় আমাদের কাছে যে টিকা আছে তা দিয়ে এ মাস চলে যাবে। তবে পরবর্তী মাসে যদি আমরা কোথাও থেকেই টিকা না পাই, তখনই সংকটে পড়ে যেতে হবে। যা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, টিকার বিষয়ে চীন বা রাশিয়া কারো থেকেই এখনো কোনো নিশ্চয়তা আসেনি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি দেখছেন, বিভিন্ন দেশে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ভারত, রাশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটা মেলানো যায় কি না। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো ফলাফল আমরা পাইনি।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে কোভ্যাক্সের টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিস্ট্রিবিউট করা শুরু করেছে। আমরাও সেই তালিকায় আছি। ওটা পেয়ে গেলে আমাদের জন্য বড় একটা সুবিধা হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম বলেন, টিকার ঘাটতি থাকছেই। হিসাব তাই বলে। এখন সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তাগাদা দিয়েছি। এর মধ্যে আমরা আমাদের অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় দুই দুই বার তাকে (সেরামকে) চিঠিও দিয়েছে। তারাও প্রত্যেকবার বলছে যে এটা অসুবিধা হবে না।

৬০ লাখ ডোজ টিকা দিতে চায় সিনোফার্ম
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশকে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম। এরইমধ্যে সরকারকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও দিয়েছে তারা।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশিদ আলম বলেন, চীনের সিনোফার্ম বলেছে, ৬০ লাখ ডোজ টিকা আমাদের ডোনেট করবে। আমরা কাগজপত্র প্রস্তুত করছি। পাশাপাশি দেশে অবস্থানরত তাদের নিজেদের লোকজনদের টিকা দিতে চায়। আমরা সে বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছি।

কবে নাগাদ টিকা আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের এক্সটেনশন অব ইন্টারেস্ট তাদের জানিয়েছি। কখন টিকা দেবে, কীভাবে দেবে বাকি সব বিষয় তারা আমাদের জানাবে। আমাদের দিক থেকে যা যা প্রয়োজন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি।

টিআই/ওএফ