সিসিটিভি ফুটেজে চিকিৎসকের ওপর হামলার দৃশ্য

জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগীর সেবার বিষয়কে কেন্দ্র করে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর রোগীর স্বজনদের হামলা ও পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম খানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ২৫ ডিসেম্বর জামালপুরে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গুরুতর আহত এক রোগী মারা যান। এ সময় রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. চিরঞ্জীব সরকারের ওপর হামলা ও জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালায়। এতে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আহত হন। হামলায় আহত হন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ১৫ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক। এ সময় ৪-৬ জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জামালপুর সদর হাসপাতালে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত এক আশঙ্কাজনক রোগীকে সেবা দেয়াকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আসা জামালপুর সদর উপজেলার ইউএইচএফপিও ডা. লুৎফর রহমানসহ হাসপাতালের কর্তব্যরত অন্যান্য চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা হামলার শিকার হন। একইসঙ্গে জামালপুর সদর থানার ওসি ও কিছু পুলিশ সদস্য দ্বারা নির্মমভাবে হামলার শিকার হন তারা। যার কিছু অংশ সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে।

পুলিশ সদস্যরা তাদের কর্তব্যে অবহেলা করেছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই সময় উপস্থিত কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব ছিল সরকারি সম্পদ সংরক্ষণ ও কর্তব্যরত সেবাদানকারীদের নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু উপস্থিত ওসি ও পুলিশ সদস্যরা তা না করে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে একত্রিত হয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের শারীরিক আঘাত করেন এবং ইউএইচএফপিওকে মারধর করতে করতে থানায় নিয়ে যান। পুলিশ হেফাজতেও উপর্যুপরি নির্যাতন অব্যাহত থাকে।

এতে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত ওসি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। একজন সরকারি কর্মকর্তাকে সরকারি স্থাপনায় পুলিশ সদস্যদের হামলার ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় ঘটনাটি ফৌজদারি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এদিকে, এই ঘটনায় জড়িতদেরকে গ্রেফতার ও কর্তব্যে অবহেলাকারী জামালপুর সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।

গঠনটির সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোগীর চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে একদল দুষ্কৃতকারী জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ভাঙচুর ও কর্মরত চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের ওপর বর্বরোচিত হামলার সঙ্গে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাবি জানাচ্ছি।

পাশাপাশি কর্তব্যে অবহেলাকারী জামালপুর সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহারসহ জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দেশের সকল হাসপাতাল ও চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনরত চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করার জন্য দেশের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানায় বিএমএ।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার আহত এক নারীর মৃত্যুর পর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তোলেন তার স্বজনেরা। পরে তারা জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মারধর করেন। ওইদিন বিকেলে কয়েক দফায় চিকিৎসক ও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিমকে প্রত্যাহারের দাবি তোলেন চিকিৎসকরা। দাবি আদায়ে গত শনিবার সকাল থেকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যৌথভাবে কর্মবিরতি পালন করে।

টিআই/এফআর