সরকারি বনভূমি অবৈধ দখলসহ স্থায়ী ক্ষতিরোধে বন অধিদপ্তর নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যে অভিযোগ করেছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী। অন্যদিকে, অবৈধভাবে বনের জায়গা দখল হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ‘বন অধিদপ্তর: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে টিআইবি।

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, বন আইনের প্রয়োজনীয় বিধিমালা, সম্পূরক আইন ও কর্মপরিকল্পনার অনুপস্থিতিসহ ৯৩ বছরের পুরনো আইনটি আমূল সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। একইসঙ্গে বননির্ভর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রথাগত ভূমি অধিকার হরণ, বন আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে একতরফাভাবে সংরক্ষিত বন, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান ঘোষণাসহ জবরদখল উচ্ছেদের নামে অধিদপ্তরের বৈষম্যমূলকভাবে ক্ষমতা চর্চা চলছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, সনাতন পদ্ধতিতে বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব ও আয়-বর্ধক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণসহ সামাজিক বনায়নের আড়ালে ‘আগ্রাসী’ প্রজাতির গাছের বনায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বন উজাড় করছে অধিদপ্তর। তাছাড়া বন অধিদপ্তরের কার্যক্রম বাস্তবায়নে অগ্রাধিকারমূলক বরাদ্দ, অবকাঠামো, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারিত না হওয়ার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেই। অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডসহ রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জন, বন সংরক্ষণ ও বনায়ন কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির বিস্তার এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি রয়েছে।

টিআইবি’র এ গবেষণাপত্রের বিষয়ে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছি না। এ পর্যন্ত বনভূমি দখল সংক্রান্ত ১২ হাজারের বেশি মামলা দায়ের করেছি আমরা।

কিছুদিন আগেও মহেশখালীতে দখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার করতে গিয়ে বনদস্যুদের হাতে এক ফরেস্ট অফিসার জীবন দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাভারেও আমাদের কয়েকজন কর্মকর্তাকে আহত করা হয়েছে। তবুও আমরা থেমে নেই, প্রত্যেক জায়গায় যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, টিআইবি'র অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া কথা। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই বলেও দাবি করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান এই কর্মকর্তা।

টিআইবির অভিযোগের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা থাকলেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বন এলাকার মানুষের কাছ থেকে খোঁজ নিলে এর উত্তর পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, আমাদের মোট বাজেটের মধ্যে সামান্য পরিমাণ পায় অধিদপ্তর। তবুও যারা সহায়তা চায় মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়।

বনের জায়গা দখলের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সেটা আছে। বলতে গেলে আমি নিজেই অত্যন্ত লজ্জিত। কিন্তু অবৈধ দখলদাররা সবাই জনপ্রতিনিধি।

উপমন্ত্রী বলেন, দখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার করতে গিয়ে আমাদের একজন কর্মকর্তা মারা গেছেন। বনভূমি উদ্ধার করতে ৫ বা ৬ জন লোক যাবেন, আর সেই এলাকার লোকরা লাঠিসোঠা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে, আমরা নিশ্চয়ই চাই না আমাদের কেউ মারা যাক। শুধু আওয়ামী লীগের আমলে এগুলো হচ্ছে না, বিএনপির আমলেও এগুলো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দোষ সবাই বন অধিদপ্তরকে দেয়, জনপ্রতিনিধিদের দেয় না; দোষ কিন্তু সবারই আছে।

এসএইচআর/টিএম