ঘুম থেকে ওঠার সুযোগ হয়নি রাসেলের
কান্নায় জর্জরিত রাসেলের চাচাতো ভাই জামাল
হাজী মুসা ম্যানসনের তত্ত্বাবধায়ক রাসেল। ২৮-২৯ বছর বয়সী রাসেল দীর্ঘ আট বছর ধরে বাড়িটির কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতেও ভবনের দোতলায় নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন রাসেল। ঘুমের মধ্যেই আগুনে পুড়ে তার মৃত্যু হয়।
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আরমানিয়ান স্ট্রিটের হাজী মুসা ম্যানসনে লাগা আগুনে ভবনের দ্বিতীয় তলায় চাচতো ভাই রাসেলের মরদেহ দেখে কথাগুলো বলছিলেন জামাল।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, রাসেলের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন পাশেই একটি টং দোকান চালাতো। আট বছর আগে এই ভবনে ছেলের কাজ ঠিক করে দেন তিনি।
জামাল বলেন, সকালে হঠাৎ ফোন পেলাম ওই বাসায় আগুন লেগেছে। এসে শুনি রাসেল রুমের ভেতরেই ছিল। দরজা খুলে বের হতে পারেনি। এদিকে, ঘটনাস্থলে রাসেলের মরদেহ দেখে আহাজারি শুরু করে তার চাচী, দুলাভাইসহ পরিবারের লোকজন।
বিজ্ঞাপন
জামাল আরও বলেন, আমরা সবাই ঢাকায় কাজ করি। রাসেলের স্ত্রী চাঁদপুরের গ্রামে বাড়িতে থাকে। আগুনের খবর পাওয়ার পর থেকেই তার স্ত্রী বার বার শুধু ফোন দিচ্ছে আর কান্না করছে। রাসেলের দুই মেয়ে। একটির তিন আরেকটির দুই বছর বয়স। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
রাসেলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় শ্বাসকষ্টে নিহত হয়েছে সুমাইয়া নামের ২২ বছরের তরুণী। তার মরদেহ একই হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
এদিকে রাসেলের ভাবি রুবিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষতিপূরণ জন্যে আবেদন করার চেষ্টা করছি। তবে কাউকে পাচ্ছি না, আপনাদের কাছে বললাম। রাসেল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। দিন এনে দিন খাই পরিস্থিতি।’
চাচাতো ভাই মো. ইমন হোসেন বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছর আগেই ভাই (রাসেল) বিয়ে করেছে। মেয়েগুলোও খুব ছোট। তার চলে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়েছে। রাসেল ভাইয়ের মামা ওলিউল্লাহ থাকতো একই ভবনের ৫ তলায়। আমরা তার সন্ধান পাচ্ছি না।’
হাজী মুসা ম্যানসন ভবনের কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুন লাগার ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- মার্কেটের গার্ড রাসেল ও চতুর্থ তলার বাসিন্দা ইডেনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া, ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ওলিউল্লাহ ব্যাপারি। আরেকজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি।
এআর/এমএইচএস