হেফাজতের গ্রেফতার কয়েকজন নেতা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তাদের আন্দোলনে অনেকের স্বার্থ ছিল। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে নাশকতার সঙ্গে শুধু তারাই নয়, আরও বহুলোক জড়িত। আমরা মনে করছি, জামায়াত শিবিরসহ জাতীয়তাবাদী (বিএনপি) অঙ্গ সংগঠনও এতে জড়িত।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মাহবুব আলম।

তিনি বলেন, অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের মধ্যে মূলধারার রাজনৈতিক যেমন ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দলের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের যোগসাজশ রয়েছে।

হেফাজতের সঙ্গে তারেক রহমানের কোনো যোগসাজশ রয়েছে কি-না- জবাবে মো. মাহবুব আলম তিনি বলেন, দেখুন অতি সম্প্রতি লন্ডন থেকে ওলামা দলের এক নেতা মিথ্যে প্রোপাগান্ডা তৈরি করছেন। তিনি বলছেন, ‘হিন্দু লোকদের নাকি জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মামুনুলকে বেদম প্রহার করা হয়েছে, জোর করে নাকি তার কাছ থেকে কোরআন নিয়ে টয়লেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’ এসব মিথ্যা অপপ্রচার, তাদের কৌশলেরই অংশ। যা কানাডা ও লন্ডন থেকে করা হচ্ছে। দেশেও বেশকিছু সদস্য (হেফাজত) আমরা পেয়েছি যারা জামায়াত শিবিরের সঙ্গে জড়িত। তাদের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি।

সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে সম্প্রতি তারেক রহমান বা জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের কোনো চুক্তিনামা বা গোপন মিটিং হয়েছিল কি-না, জবাবে ডিবির এ যুগ্ম কমিশনার বলেন, সেটা আমরা এখনও পরিষ্কার হইনি। তবে আগে ২০১৩ সালে যে গোপন মিটিং হয়েছিল সেটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সম্প্রতি জুমে মিটিং বা ফোনালাপে হতে পারে। সেটা আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে গ্রেফতারদের অনেকেই স্বীকার করেছেন, হেফাজতের সম্প্রতি তৎপরতায় অনেকের স্বার্থ রয়েছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে নাশকতার সঙ্গে শুধু তারাই নয় আরও বহুলোক জড়িত। আমরা মনে করছি, জামায়াত শিবিরসহ জাতীয়তাবাদী অঙ্গ সংগঠন ও অন্যান্য দলও রয়েছে।

হেফাজতের অর্থের জোগানদাতা কারা- জবাবে মাহবুব আলম বলেন, সেগুলো আমরা তদন্ত করছি। বাইরে থেকে আসে। কোনো আন্দোলনকে ঘিরে সম্প্রতি মোটা অঙ্কের কোনো অর্থের জোগান হয়েছে বা রাজনৈতিক দল ফান্ডিং করছে কি-না সেটা নিশ্চিত না। অর্থ সম্পদের ইস্যুটি তদন্তের বিষয়। এছাড়া অনেক হেফাজত নেতার নারী কেলেঙ্কারি রয়েছে। বহু বিবাহও রয়েছে। তবে এরকম গোপনে চুক্তিতে বিয়ে রয়েছে কি-না তা আমাদের জানা নেই। মামুনুল হক ধরা পড়েছেন বিধায় বিষয়টি সামনে এসেছে।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে এবং সম্প্রতি হওয়া হেফাজতের আন্দোলনের লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়া। অর্থাৎ হেফাজতকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার যাবার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তারা মনে করে, নিজ দলের পরিচয়ে সম্ভব নয় তবে হেফাজতের প্লাটফর্মে সম্ভব। যেমন খেলাফত মজলিস বা জামায়াতে ইসলামিরা তেমনই মনে করে।

হেফাজত কেন্দ্রিক অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, এই হেফাজত কেন্দ্রিক গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে। নাশকতার সঙ্গে জড়িত, ইন্ধনদাতাদের গ্রেফতার করা পর্যন্ত অভিযান চলবে। জড়িত কাউকেই ছাড় নয়, সে হেফাজতের শীর্ষ নেতা হলেও।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি হেফাজতের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ সারাদেশে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় মোট ৫৩টি মামলা দায়ের হয়। মোট ৬৪টি মামলা তদন্তাধীন আছে।

এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহ-অর্থসম্পাদক মুফতি ইলিয়াস হামিদি, সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী, কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফ উল্লাহ, ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি জুবায়ের, যুগ্ম-মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিবসহ ১৪ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তারা ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছেন।

জেইউ/এফআর