মিরপুর-১২ থেকে করোনা পজিটিভ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসেছিলেন খালেদা পারভিন। সুস্থ হয়ে হাসপাতালের সামনে বোনকে নিয়ে বসে ছিলেন তিনি। যাবেন বোনের বাসায় লালবাগে। সঙ্গে অনেক কিছু আছে। একদিকে বোনকে ধরে রাখতে হচ্ছে, অন্যদিকে গাড়িও ডেকে আনতে হবে। কী করবেন তিনি?

এসময় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বৃহন্নলার সদস্যরা এসে বললেন, কিছু মনে করবেন না। আপনাকে আমরা বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি? প্রথমে তাদের এগিয়ে আসা ভালোভাবে নেননি খালেদা পারভিন। পরে বৃহন্নলার সদস্যরা বুঝিয়ে বললে তাদের সঙ্গে যেতে রাজি হন। নিজস্ব অটো রিকশায় বিনা ভাড়ায় পারভিনদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসেন অচেনা মানুষেরা।

ঢামেক করোনা ইউনিটে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন, তাদের সেবায় এগিয়ে আসছে বৃহন্নলা নামে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর সদস্যরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। প্ল্যাকার্ড হাতে কারো সাহায্য লাগবে কি না জানতে চায় সংগঠনটি।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অনেকেই বিরক্তি বা আতঙ্কের চোখে দেখেন। ঢাকায় তো কথাই নেই। পার্ক, রাস্তা ও গণপরিবহনে রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সরব উপস্থিতি। মুখের সামনে অতর্কিতে হাত বাড়িয়ে অথবা গায়ে পড়ে তারা টাকা দাবি করেন তারা। টাকা না দিলে অশ্লীল গালিগালাজের ঘটনাও ঘটে। 

তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলোই চিরচেনা সেই অভ্যাস পরিবর্তন করে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসতে দেখে অবাক অনেকেই। 

কথা হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বৃহন্নলার সদস্য মুনমুনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। করোনাকালে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসতে পারায় আমাদের অনেক ভালো লাগছে। আমরা ১০ জন এ সংগঠনে আছি। সাদিকুল ইসলাম আমাদের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। আমরা কোনো কিছুর বিনিময়ে সাহায্য করছি না। 

তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, সাহায্য করলে অনেকে আমাদের টাকা দিতে চান। তারা মনে করেন, আমরা টাকার বিনিময়ে সাহায্য করছি। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি, তারপর তারা বুঝতে পারেন।

বৃহন্নলার প্রতিষ্ঠাতা সাদিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। এরপর থেকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কাজ করছি। লকডাউনে আমরা সিদ্ধান্ত নিই করোনায় যারা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, তাদের কীভাবে সহায়তা করা যায়। পরে আমরা প্রতিদিন পাঁচজন করে এখানে আসি অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রোগীদের সাহায্য করি।

তিনি বলেন, সহায়তা করতে চাইলে অনেকে ভালোভাবে নেন, আবার অনেকে নেন না। যাদের কাছে টাকা পয়সা নেই, ঢাকার মধ্যে হলে আমরা আমাদের অটোরিকশা দিয়ে ফ্রিতে তাদের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।

সাদিকুল বলেন, আমরা যারা এখানে ফ্রিতে সেবা দিচ্ছি তাদেরকে এখানকার কর্মচারীরা ভালোভাবে নেন না। কারণ তারা রোগীদের ট্রলি বা হুইল চেয়ারে ওঠাতে পারলেই টাকা আদায় করতে পারেন। আর আমরা দিয়ে এলে তো টাকা পান না। আমাদের এখানে ১০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ স্বেচ্ছায় কাজ করেন। লকডাউন উঠে গেলে আমরা আর এখানে আসব না।

এসএএ/ওএফ/জেএস