টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব না হওয়ায় আরমানিটোলার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবদিহিতার অভাব। 

রোববার (২৫ এপ্রিল) টিআইবির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়ে আরমানিটোলার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, একটি ঘটনা ঘটলেই এর কারণ অনুসন্ধানে অনেকগুলো তদন্ত কমিটি হয়, আরমানিটোলার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ হবে কতটা? পুরান ঢাকার নিমতলী ট্র্যাজেডির ১১ বছরেও কেন রাসায়নিকের গুদামগুলো সরানো গেল না? স্থায়ী রাসায়নিক পল্লী কেন প্রস্তুত হলো না? লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ থাকার পরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কীভাবে ব্যবসা চলছে? এমন সব প্রশ্ন আবারো সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। 

তিনি বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে এমন আশাবাদ করতেও ভয় হচ্ছে। কেননা নিমতলী, চুড়িহাট্টার মতো ভয়াবহ ঘটনার পরও রাসায়নিকের গুদাম স্থানান্তরের জায়গাই পরিবর্তন হয়েছে চারবার, যা দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পরিকল্পনাহীনতা ও দায়িত্বহীনতার চূড়ান্ত উদাহরণ। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই নিমতলীর তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।

টিআইবি বলছে, নিমতলী ও চুড়িহাট্টার মতো মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পরও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি কতিপয় মহলের যোগসাজশ ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক ও দাহ্যপদার্থের গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর উচ্চ আদালত পুরানো ঢাকার রাসায়নিক গুদামগুলো কেন সরিয়ে ফেলা হবে না কারণ দর্শানোর এমন নির্দেশ প্রদান করলেও দীর্ঘ ১১ বছরে সরকার কর্তৃক আদালতে কোনো জবাব দাখিল করা হয়নি। 

এ বিষয়ে  ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা প্রতিপালন না করার পাশাপাশি আদালত অবমাননাও করেছে। আবার এসব ঘটনায় করা মামলাগুলোও ঝুলে আছে পুলিশ প্রতিবেদনের অপেক্ষায়। সবমিলিয়ে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেওয়ার ব্যর্থতার পাশাপাশি দীর্ঘ এই সময়ে পুরো এলাকা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিমুক্ত করায় সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা যে পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল, তা বললেও অত্যুক্তি হবে না। 

তিনি বলেন, দ্রুত অগ্নি নির্বাপণের জন্য পুরান ঢাকায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বরং বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার সুযোগে কতিপয় মহল অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদাম, কারখানা ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার একটি অসাধু ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

বিবৃতিতে আরমানিটোলার ঘটনাসহ নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা; ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কারখানা চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধ করে অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে স্বল্পমেয়াদী অবকাশ দিয়ে স্থানান্তর; আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক ব্যবসা নিষিদ্ধ; সরকারিভাবে নির্মাণাধীন অস্থায়ী গুদাম প্রকল্প ও স্থায়ী রাসায়নিক পল্লী প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সব রাসায়নিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক স্থানান্তর করার জোর দাবি জানানো হয়।

আরএম/আরএইচ/জেএস