ট্রাস্টের সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল

সিলেট অঞ্চলে করোনাকালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়ে আসছে আব্দুল জব্বার জলিল ট্রাস্ট। নগরের ছয় শতাধিক ব্যক্তি এ সেবা পেয়েছেন। 

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এ সংস্থার অক্সিজেন সেবা প্রত্যাশী চারগুণ বেড়েছে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা নিজেদের কেনা ২২টি সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীরা। এছাড়া রোগীদের অক্সিজেন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আরও সাতটি সিলিন্ডার জোগাড় করে সেবা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। 

কিন্তু ভারত থেকে সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় অক্সিজেন সংকট হতে পারে। এতে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবার কার্যক্রম বন্ধ হতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন ট্রাস্টের সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল।  

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আগে আমাদের কল সেন্টারে দিনে দু-তিনটি কল আসতো। এখন কমপক্ষে আটটি আসছে। গত ১৫ দিনে অক্সিজেন বেশি সরবরাহ করতে হচ্ছে। এখন অক্সিজেন সংগ্রহ করছি দক্ষিণ সুরমা অঞ্চলের বাইপাস সড়কের নির্দিষ্ট স্থান থেকে। অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হতে পারে ভেবে আমি রাতে ঘুমাতে পারছি না।

জানা গেছে, গত বছর আব্দুল জব্বার জলিল বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করার উদ্যোগ নেন। একই বছরের মার্চে করোনাকালে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইকবাল হোসেন খোকা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেলে জলিল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

আব্দুল জব্বার জলিল জানান, আমার বন্ধু খোকাকে বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়। পরে আমি সিলেটে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা শুরু করি।

আব্দুল জব্বার জলিল ট্রাস্টের কল সেন্টারের সঙ্গে থেকে নিয়মিত পরিস্থিতি তদারকি করেন মদনমোহন কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কাশেম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক ব্যক্তিকে অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয়েছে। এখন দিনরাত অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় বাসায় দিয়ে আসছেন আমাদের টেকনেশিয়ান ও স্বেচ্ছাসেবীরা। কয়েকদিন আগে উপশহর এলাকার এক দম্পতি একসঙ্গে শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন। কোথাও অক্সিজেন সেবা না পেয়ে আমাদের কল করেন। আমরা তাদের অক্সিজেন সরবরাহ করি। তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন।

সিলেট মহানগরীর আনন্দ টাওয়ারে রয়েছে ট্রাস্টের কল সেন্টার ও অফিস। তাদের দেওয়া তথ্যানুসারে, ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে সিলেটে কোভিড আক্রান্ত ছাড়াও অন্যান্য শ্বাসকষ্টের রোগীদের মধ্যে তারা বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই অক্সিজেন সেবা এখনও অব্যাহত রয়েছে। কল সেন্টারের (০১৭৩৩৩০৯৮৬২/ ০১৭৩৩৩০৯৮৬৩) মাধ্যমে কোভিড ও নন-কোভিড শ্বাসকষ্টের রোগীদের মাঝে ২৪ ঘণ্টা ফ্রি অক্সিজেন সেবা দেওয়া হচ্ছে।

অক্সিজেন সেবা দিতে খরচের সিংহভাগই আব্দুল জব্বার জলিল জোগাড় করেন। কখনো কখনো কোনো কোনো বন্ধুও সহায়তা করেন। যেমন সম্প্রতি জালালপুর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছানাউল হক এবং সৈয়দ ফয়সল উপস্থিত হয়ে আব্দুল জব্বার জলিলের কাছে এক লাখ টাকা তুলে দেন।

সিলেট মহানগরের জনসাধারণের অবগতির জন্য ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নিয়মিত বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবার বিষয়টি জানানো হয়। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সিলেটেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। 

এটি জানায়, সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেনের অভাবে যখন মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করছিল এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিল, তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের পরামর্শ ও সহযোগিতায় আব্দুল জব্বার জলিল ট্রাস্টের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কোভিড ও নন-কোভিড শ্বাসকষ্টের রোগীদের মধ্যে অভিজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থাপনায় ও দক্ষ টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে এবং কল সেন্টারের মাধ্যমে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ফ্রি অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম শুরু করা হয়।

আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, বাংলাদেশকে করোনামুক্ত ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত আমাদের বিনামূল্যের অক্সিজেন সেবা অব্যাহত থাকবে। আমার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমি এ সহায়তা দিতে পেরে স্বস্তি বোধ করি।

পিএসডি/আরএইচ