আয়শা খানমকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত আয়শা খানম
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশিষ্ট নারীনেত্রী আয়শা খানমকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সংগঠন।
শনিবার (২ জানুয়ারি) ভোরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
বিজ্ঞাপন
নারীর মানবাধিকার আন্দোলনের অন্যতম এ পুরোধার মরদেহ সকাল ৯ টায় সেগুনবাগিচায় মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর কমিটি, নারায়ণগঞ্জ শাখা ও বেলাবো শাখা শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে দীপ্ত ফাউন্ডেশন, নারী প্রগতি সংঘ, সেভ দ্য চিলড্রেন, নারীমুক্তি সংসদ, নারীপক্ষ, দলিত নারী ফোরাম, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি, ঐক্য-ন্যাপ, মণি সিংহ-ফরহাদ ট্রাস্ট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নারী সেলের প্রতিনিধিরা আয়শা খানমকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিজ্ঞাপন
সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, গণসাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সালমা আলী, শিক্ষাবিদ মাহফুজা খানম, তপতী সাহা মহিলা পরিষদকে টেলিফোনে শোক জানান।
মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুফিয়া কামালের আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করেন সংগঠনের নেত্রীরা।
আয়শা খানম ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর নেত্রকোনার গাবড়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯-৭০ এর দিকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবাধিকার ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি মহিলা পরিষদের সাথে যুক্ত হন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সাল থেকে তিনি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, আইন সংস্কার আন্দোলন, সিডও বাস্তবায়নসহ নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তিনি একজন দক্ষ, সংগঠক ও সুবক্তা ছিলেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তার কন্ঠ ছিলো সোচ্চার। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি ও লবির ক্ষেত্রে তিনি পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী নারী আন্দোলনকে করে গড়ে তুলতে তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
২০০২ সাল থেকে ৬৮ টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারিয়েট এর নেতৃত্ব প্রদান করে আসছিলেন। বৈশ্বিক নারী আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি ১৯৯২ সালে ভিয়েনাতে দ্বিতীয় মানবাধিকার সম্মেলনে এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিং এ ৪র্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১১ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত সিডও কমিটির এবং কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেন (সিএসডব্লিউ) এর বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন। নারী ইস্যুতে তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন।
জেইউ/এসআরএস