সরকারের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের পরও থামানো যাচ্ছে না ঢাকা ছাড়া মানুষের ঢল। বাড়ি ফেরা রোধে ফেরি চলাচলও বন্ধ করেছিল সরকার। কিন্তু তারপরও কমেনি মানুষের ঢল। উদাসীন মানুষের এ ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার (৮ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের লেখেন,  করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা কিছুটা নিম্নমুখী হলেও বিপদ কাটেনি। উদাসীন মানুষের ছুটন্তযাত্রায় আমি নিজেও উদ্বিগ্ন। পূর্ণিমার চাঁদ দেখার মতো সেই মনটাও আজ যেন মরে গেছে। স্মৃতির মিছিলগুলো আজ যেন ছন্দহারা হরিণের মতো পথহারা।

তিনি লেখেন, করোনার মতিগতি বোঝার সাধ্যি কারো নেই। দুনিয়াজুড়ে বেপরোয়া গতিতেই ছুটে চলেছে অবিরাম। কভিডের এই ছুটন্ত মিছিলের শেষ কোথায় কেউ জানে না। দ্বিতীয় তরঙ্গ ভীষণ ভয়ংকর। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস কাজে লাগছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেডিকশন কভিডের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা অসহায়ভাবে কেবল নিষ্ফল প্রেসক্রিপশন দিয়ে যাচ্ছেন। বিশাল ভারত এখন করোনার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড। বিখ্যাত অক্সিজেন উৎপাদক দেশে আজ অক্সিজেন সংকট। হাসপাতালে একটি বেডের জন্য হাহাকার লেগেই আছে। কার পার্কিং, ফুটপাত এখন ভারতে শ্মশানঘাট। চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে সংক্রমণ। প্রতিদিন মরছে কয়েক হাজার মানুষ। দ্বিতীয় তরঙ্গের আঘাতে এমনিতেই আমাদের উদ্বেগ-আতঙ্ক চরমে। বিশাল একটি অংশ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। সর্বত্রই মাস্ক ব্যবহারে চরম অনীহা। হাত ধোয়ার বালাই নেই। নেই সোশ্যাল ডিসটেন্সিং। সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা কিছুটা নিম্নমুখী হলেও বিপদ কিন্তু কাটেনি। ভ্যাকসিনের ঘাটতি মেটাতে শেখ হাসিনা সরকারের সর্বাত্মক আন্তরিক প্রয়াস আশা করি ব্যর্থ হবে না। তবু মানুষ ছুটছে শহর থেকে গ্রামে। লকডাউনকে ফাঁকি দিয়ে গ্রামমুখী মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথ থেকে এই সেদিনই সলিল সমাধি হলো ২৬টি মূল্যবান জীবনের। তবু উদাসীন মানুষের ছুটন্তযাত্রার যেন শেষ নেই!

তিনি লেখেন, করোনার করাল গ্রাসে বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। ধরিত্রী আজ ধুঁকছে ভাইরাসের ভয়ংকর আঘাতে। বদলে যাচ্ছে দেশের চিত্র। বদলে যাচ্ছে মানুষের মন। দেশে দেশে শরণার্থীদের অসহায় আর্তনাদ। কর্মহীন বেকারের চিত্র সারা দুনিয়ায়। হু হু করে বাড়ছে গরিব মানুষের সংখ্যা। করোনা কাবু করে ফেলেছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে। প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হচ্ছে অস্বাভাবিক গতিতে। ভ্যাকসিন সংকটে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। দেশে দেশে অশান্তি। সুখের সব শহর আজ অসুস্থ। শান্তির জন্যে নোবেল পেয়েও ইথিওপিয়া অশান্ত। গৃহযুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত সোমালিয়া। বিধ্বস্ত মোজাম্বিক। সুদানের যুদ্ধ আজো থামেনি।….

এদিকে আমাদের প্রতিবেশী ভারতে করোনার তৃতীয় তরঙ্গের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। পাশের দেশের বাসিন্দা আমাদের তাহলে কী হবে? অভিন্ন শত্রু করোনাকে বাদ দিয়ে এখনো এখানে রাজনীতির ’ব্লেম-গেইম’ চলমান। যত দোষ কেবল নন্দ ঘোষ শেখ হাসিনা ও তার সরকারের। অথচ বাংলাদেশ এখনো তুলনামূলকভাবে ভালো আছে। শেখ হাসিনার মতো সাহসী, দূরদর্শী ও মানবিক নেতৃত্বের কারণে। জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় করে তিনি পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়েছেন। করোনায় বদলে গেছে আমাদের চিরচেনা ঢাকা শহরের চিত্র। আনন্দ উৎসবের সেই চেনাসুর আজ অচেনা হয়ে গেছে। কোলাহল মুখরিত ক্যাম্পাসগুলোতে এখন কেবলই শূন্যতার হাহাকার। চঞ্চল তারুণ্যের ছুটন্ত মিছিল এখন আর চোখে পড়ে না।…

আমাদের সুন্দর গ্রামগুলো এখন হতাশায় হতশ্রী। পাখির গান, রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ, নদীর কলতানের চিরচেনা সুর যেন  হারিয়ে গেছে। পূর্ণিমার চাঁদ দেখার মতো সেই মনটাও আজ যেন মরে গেছে। করোনার স্রোতধারায় স্মৃতির মিছিলগুলো  আজ যেন ছন্দহারা হরিণের মতো পথহারা। কতো বোবা কান্না মানুষের অন্তরে গুমোট বেঁধে আছে। না বলা বেদনায় কতো মানুষ বিষাদসিন্ধুতে ভাসছে…

পিএসডি/এসকেডি