চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে রাজধানীতে চতুর্থ দিনের মতো বাস চলাচল করছে। গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পর প্রথম দিন ছিল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস। পরের দুদিন ছিল সাপ্তাহিক বন্ধ। এরপর আজ রোববার (৯ মে) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রাজধানীর সড়কগুলোতে বাসের আনাগোনা অনেকটা বেড়েছে। বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অফিসগামীদের।

বাস চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে বেশিরভাগ বাস মালিক হাতেগোনা কিছু বাস সড়কে নামায়। তাছাড়া ২১ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক চালক ও তাদের সহকারীরা ছুটি ছিল। যে কারণে কোম্পানিগুলো সব বাস সড়কে নামাতে পারেনি।

রোববার (৯ মে) রাজধানীর সাইন্সল্যাব, কলাবাগান, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব সড়কে বাসের সংখ্যা গত তিন দিনের তুলনায় অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি সড়কে ছিল ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের আধিক্যও। এ কারণে সড়কগুলোর কোথাও কোথাও যানজট লেগে ছিল দীর্ঘ সময় ধরে। আবার কোথাও কোথাও যানজট কয়েক মিনিট অপেক্ষার পরই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

সড়কে বাসের সংখ্যা গত তিন দিনের তুলনায় অনেক বেড়েছে

সাইন্সল্যাব মোড়ে কথা হয় বিকাশ পরিবহনের এক চালকের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের কোম্পানির বেশিরভাগ বাস আজ রাস্তায় চলাচল করছে। একই সড়কে চলাচল করা ভিআইপি পরিবহনের চালক আনিস বলেন, ‘সরকার তো করোনার কথা কইয়া মেলা দিন বাস বন্ধ রাখছে। অনেকে বাড়ি চলে গেছে। মালিক খবর দিছে, এখন সবাই কামে যোগ দিছে। সব বাসই রাস্তায় আছে।’

এদিকে সড়কে বাস চলাচল বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত সিট পেতে আজও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বাসেই নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে না। তবে কয়েকটি বাসে দুই-চার জন বাড়তি যাত্রী নিতেও দেখা গেছে। তাছাড়া বাসে ওঠার পর স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পরার ক্ষেত্রে কিছু কিছু যাত্রীর অনীহা দেখা গেছে।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নিজাম উদ্দিন নামের এক যাত্রী। তিনি জানান, আধা ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারেননি। একই ভোগান্তির কথা জানালেন পাশে দাঁড়ানো আরেক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার কারণে বাস পাওয়াটা মুশকিল হচ্ছে, বিশেষ করে যারা মাঝ রাস্তা থেকে উঠছেন তাদের।’ কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এ ব্যবস্থা জরুরি বলেও মনে করেন এই যাত্রী।

বাস চলাচল বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত সিট পেতে আজও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের

গাড়ির চাপ বাড়ায় সড়কে বসানো চেক পোস্টগুলোতে পুলিশ সদস্যদের গাড়ির চাপ সামলাতে বেশ বেগ পেতে দেখা গেছে। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাবতলী-কলাবাগান-মিরপুর রোডে সকাল থেকেই যানবাহনের চাপে খণ্ড খণ্ড যানজট ছিল। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে চেক পোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক (সার্জেন্ট) মোহাম্মদ আবদুল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গত দুদিন রাস্তায় এত বাস ছিল না। আজ রাস্তায় বাসের অভাব নাই। বাস, প্রাইভেট কার, মোটারসাইকেলসহ বিভিন্ন গাড়ি রাস্তায় নামায় আমাদের কাজের চাপ বেড়ে গেছে। গাড়ির এত চাপের মধ্যে ঠিকমতো চেকও করা যাচ্ছে না। কারা দরকারে বের হয়েছে বা কারা এমনিতেই, সেসব জানার জন্য বেশি সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না।’

সরকার ঘোষিত চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে ২১ দিন পর বৃহস্পতিবার রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। এক্ষেত্রে সরকার বেশকিছু শর্ত দিয়েছে। তা মেনেই গণপরিবহন চালানোর আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করে। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি আশানুরূপ নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। সেটি পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এরপর তা ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সব শেষে এই বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে বিধিনিষেধ চলার মধ্যেই ২৫ এপ্রিল থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেওয়া হয়। খোলা রয়েছে ব্যাংকও। এছাড়া জরুরি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অফিসগুলোও খোলা রয়েছে।

এনআই/এসএসএইচ