কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন

স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক পাওয়া প্রখ্যাত সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

রোববার (০৩ জানুয়ারি) বিকেলে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এক শোকবার্তায় রাবেয়া খাতুনের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন মন্ত্রী।

শোকবার্তায় শ ম রেজাউল করিম বলেন, বাংলা সাহিত্যে রাবেয়া খাতুনের অবদান অনস্বীকার্য। তার সাহিত্যে বড় অংশ জুড়ে আছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ। বাংলা সাহিত্যের এ উজ্জ্বল নক্ষত্র বাঙালি হৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।

সাহিত্যের সব শাখায় সফলভাবে বিচরণ করা মহিয়সী এ নারী দীর্ঘ জীবনে বাংলা সাহিত্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য পুরস্কারেও।

১৯৩৫ সালে বিক্রমপুরে জন্ম হয় রাবেয়া খাতুনের। লেখালেখির পাশাপাশি শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতাও করেছেন।

উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথাসহ চলচ্চিত্র ও নাট্য জগতেও বিচরণ রাবেয়া খাতুনের। তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘মেঘের পরে মেঘ’ জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র। ‘মধুমতি’ এবং ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টিও প্রশংসিত হয়েছে সব মহলে।

রাবেয়া খাতুন উপন্যাস লিখেছেন পঞ্চাশটিরও বেশি। এ পর্যন্ত চার খণ্ডে সংকলিত ছোটগল্প সংখ্যায় চারশ’র বেশি। ছোটদের জন্য লেখা গল্প-উপন্যাসও সংখ্যায় কম নয়। বাংলাদেশের ভ্রমণ সাহিত্যের প্রধানতম লেখক তিনি। প্রথম উপন্যাস মধুমতী (১৯৬৩) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি পান। ক্ষয়িষ্ণু তাঁতি সম্প্রদায়ের জীবন সংকট ও উঠতি মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্ব জিজ্ঞাসার মধ্যে ব্যক্তিকে আবিষ্কার করেছিলেন রাবেয়া খাতুন এই উপন্যাসে।

রাবেয়া খাতুন ভ্রমণ সাহিত্য রচনাকে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচনা করেছেন বলে তার ভ্রমণ সাহিত্যের বইও অনেক। বেশকিছু আত্মজৈবনিক স্মৃতিমূলক রচনা লিখেছেন। একাত্তরের নয় মাস (১৯৯০) বইয়ে লিখেছেন একাত্তরের শ্বাসরূদ্ধকর দিনগুলোর কথা।

সাহিত্যচর্চার জন্য পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৯৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩), নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯৫), হুমায়ূন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯), কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯৪), শের-ই-বাংলা স্বর্ণপদক (১৯৯৬), ঋষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮), লায়লা সামাদ পুরস্কার (১৯৯৯) ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯)।

ছোটগল্পের জন্য পেয়েছেন নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৯৮)। সায়েন্সফিকশন ও কিশোর উপন্যাসের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬), অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮), ইউরো শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৩)। ছোটগল্প ও উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে প্রেসিডেন্ট (১৯৬৬), কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি (২০০৩), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪), ধ্রুবতারা, মধুমতি (২০১০)।

টিভি নাটকের জন্য পেয়েছেন টেনাশিনাস পুরস্কার (১৯৯৭), বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলেনিয়াম অ্যাওয়ার্ড (২০০০), টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাওয়ার্ডসহ (২০০০) তিনি এ পর্যন্ত অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।

একে/এইচকে