মিতু হত্যা: প্রত্যক্ষদর্শী ছেলে মাহিরের সঙ্গে কথা বলতে চায় পিবিআই
মাহমুদা খানম মিতুর ফাইল ছবি
চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ছেলে মাহির। সেদিনের ৫ বছর বয়সী ছেলের সামনেই মা মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। মায়ের শরীরের রক্তে সেদিন লাল হয়েছিল ছোট্ট মাহিরও। সম্প্রতি বাবা সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা নতুন মামলায় ছেলে মাহিরের সঙ্গে কথা বলতে চায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তবে বাবুল আক্তার গ্রেফতারের পর মোহাম্মদপুরের বাসা ছেড়ে গেছেন তার বর্তমান স্ত্রী। সঙ্গে নিয়ে গেছেন বাবুল আক্তার-মিতুর দুই সন্তান মাহির ও তাবাস্সুমকে। এখন পর্যন্ত তাদের সন্ধান পায়নি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, সম্ভাব্য সব বিষয় প্রাধান্য দিয়ে প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে প্রত্যক্ষদর্শী ছেলে মাহিরকেও।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, মিতুকে যখন হত্যা করা হয় তখন তার সঙ্গে ছিল বাবুল আক্তারের ছেলে। ঘটনার সময় ছেলে পাশেই দাঁড়ানো ছিল। মামলার তদন্তের প্রয়োজনে তার সঙ্গে কথা বলা হবে। বাবুল আক্তারের রিমান্ড শেষ হওয়ার পরই ছেলের সঙ্গে কথা বলা হবে।
বিজ্ঞাপন
গত বুধবার (১২ মে) দুপুরে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মোট আটজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বাবুল আক্তারের শ্বশুর অর্থাৎ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
এ ব্যাপারে আজ রোববার (১৬ মে) পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন মামলায় বাবুল আক্তারের ঠিকানা ভুল ছিল। সঠিক ঠিকানায় খুঁজেও বাবুল আক্তারের দুই সন্তান ও বর্তমান স্ত্রীর সন্ধান পাইনি।
তিনি বলেন, নতুন মামলায় মিতুর সন্তান প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা লাগতে পারে। সেজন্য আগে দরকার বাবুলের দুই সন্তানের নিরাপত্তা ও সঠিক হেফাজত। এখন পর্যন্ত আমরা জানি না বাবুল-মিতুর দুই সন্তান কোথায়। তবে আমরা বাবুল আক্তারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের বলেছি দুই সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে জানাতে।
এর আগে বাবুল আক্তারের শাশুড়ি ও মিতুর মা শায়লা মোশাররফ ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, মিতু আমার প্রথম ও বড় সন্তান। মিতুর ছেলে মাহির আমার প্রথম নাতী। বাবুল আক্তার আমাদের বাসা ছেড়ে যাবার পর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। দুই নাতি-নাতনিকে দেখতে পর্যন্ত দেয়নি। আজ মিতু কবরে, বাবুল জেলে। এই অবস্থায় দুই নাতি-নাতনিকে কে দেখবে? আমরা ওদের দায়িত্ব চাই। আমি ওদের আমার বুকে চাই। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে রোববার বাবুল আক্তারের শ্বশুর ও মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা-নানী হিসেবে আমরা পারিবারিক আদালতের দ্বারস্থ হব। কোর্ট এখন বন্ধ আছে। কোর্ট চালু হওয়া মাত্র আমরা আদালতে দুই নাতি-নাতনির অভিভাবকত্ব পেতে আবেদন করব।
এ ব্যাপারে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, বাবুল আক্তারের দুই সন্তান কাদের অভিভাবকত্বে থাকবে সেটা পিবিআই নির্ধারণের এখতিয়ার নেই। এটা নির্ধারণ করবে আদালত। অথবা দুই পরিবার নিজেরা আলোচনা করেও সমাধান করতে পারে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হয়েছিলেন মিতু। কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সে সময়কার পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে।
ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার (১১ মে) ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত ১২ মে দুপুরে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার শ্বশুর অর্থাৎ মিতুর বাবা। মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও সাতজনকে। তারা হলেন- কামরুল ইসলাম মুছা, কালু, ওয়াসিম, শাহজাহান, আনোয়ার, এহতেসামুল হক ভোলা ও সাকি।
জেইউ/এইচকে