রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল আধুনিকায়ন করে চালুর দাবি
রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল আধুনিকায়ন করে চালুসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। সোমবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টস ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ব্যক্তব্যে পরিষদটির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান বলেন, করোনা মহামারির ফলে বিশ্বে সৃষ্ট পরিস্থিতি পরিবেশ সম্মত পণ্য ব্যবহারের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে প্লাস্টিক পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয় কমাতে উন্নত দেশগুলোতে ২০২২ সাল থেকে পাট ও তুলা জাতীয় পণ্যের ব্যবহার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ফলে বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্যের বিপুল চাহিদার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব জুড়ে পাটপণ্যের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ ও ভারত পাট-পাটপণ্য উৎপাদনকারী প্রধান দুটি দেশ। উল্লেখ্য, ভারতের পাটপণ্য উৎপাদন ১৬ লাখ মেট্রিক টন থেকে কমে ১১ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। এই মুহুর্তে ভারতের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি করার মত সামর্থ্য নেই।
তিনি আরও বলেন, এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে দ্রুত বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু এ সময় সরকার রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধ করে দিল। পাট শিল্প নিয়ে পূর্বাপর ভাবনা চিন্তা, গবেষণা, সার্ভে না করে সরকার সমর্থক কতক ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ও আমলাদের পরামর্শে আকস্মিক পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিজ্ঞাপন
কামরুল আহসান বলেন, এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল বাংলাদেশের একমাত্র পাটকল। এখন ১৬ হাজার তাঁতের মধ্যে চালু চার হাজার ৮১২টি তাঁত। এর উৎপাদন ক্ষমতা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন। অথচ তথ্য বলছে (বিজেএমও-বিজিএমসি কর্তৃক) আন্তর্জাতিক বাজারে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন রপ্তানি হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের চাহিদা ও রপ্তানি মিলিয়ে এখনই চাহিদা পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীন চাহিদার জন্য দরকার অন্তত দেড় লাখ মেট্রিক টন পাটপণ্য। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ভারতের সাথে আলোচনা করে এন্টি-ডাম্পিং প্রথা প্রত্যাহার করে ভারতের বাজার ধরতে উদ্যোগী হতে হবে। তাহলে অন্তত ৪-৫ লাখ মেট্রিক টন পাট পণ্যের বাজার পাওয়া যাবে। আর আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিক টন তো রয়েছে, যা আরো বাড়বে। সব মিলিয়ে এখনই আমাদের ৯ লাখ মেট্রিক টন পাটপণ্য উৎপাদনের লক্ষ নিয়ে এগুনো দরকার। আর পাটপণ্য ও সুতা মিলিয়ে মোট ১৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে নতুন করে দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরীর সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
এসময় পাটকল চালুর জন্য দুটি প্রস্তাব করে পরিষদটি। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- চীনের দেওয়া প্রস্তাবিত এমওইউ'র ভিত্তিতে পাটকল আধুনিকায়ন ও চালু করা এবং শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) প্রস্তাবিত এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল আধুনিকায়ন করে চালু করা। যার মধ্য দিয়ে ৭৫ হাজার শ্রমিকের চাকুরি নিশ্চিত হবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানিয়ে বলা হয়- অবিলম্বে আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল চালু করুন; ২০১৮ সালে অধিগ্রহণ করা ছয়টি পাটকল ও সাতটি বস্ত্রকল আধুনিকায়ন করে চালু করুন। রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের পাটকল শ্রমিকসহ অধিগ্রহণকৃত পাটকল ও সুতাকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করুন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদটির আহ্বায়ক সহিদুল্লাহ চৌধুরী, যুগ্ন আহ্বায়ক আসলাম খান ও বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকরা।
এইচএন/ওএফ