ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেছেন, একটি খালের বহুবিধ ব্যবহার থাকলেও ওয়াসার দায়িত্ব ছিল কেবল খাল ব্যবহার করে পানি সরিয়ে দেওয়া। ফলে খালগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া খাল নিয়ে আলাদা কোনো বাজেটও ওয়াসার ছিল না। 

তিনি বলেন, আমরা কেবল খাল থেকে সলিড বর্জ্য নিষ্কাশন করতাম। অথচ একটি খাল হতে পারে সুন্দর জলাশয়, খাল হতে পারে নৌপথ, আবার খালের দুই ধারে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা যায়। এর কোনোটিই করার অধিকার আমাদের ছিল না। এসব কারণে খালের পূর্ণাঙ্গ রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়নি।

সোমবার (৪ জানুয়ারি) ওয়াসা ভবনে আয়োজিত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তাকসিম এ খান বলেন, একটি ভুল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার বৃষ্টির পানি অপসারণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির পানি অপসারণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার ছিল না। ১৯৮৮ সালে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে এই দায়িত্ব নিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে দেওয়া হয়ে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা আছে দায়িত্বটি সিটি করপোরেশনের কাছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু একটি ভুল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী ঢাকা শহরের পানি ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মত দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসা অনুধাবন করে ১৯৮৮ সালে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন সংক্রান্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি ঢাকা ওয়াসা অ্যাক্ট-১৯৯৬ এর সাথে সাংঘর্ষিক। এর প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ঢাকা ওয়াসা'র পক্ষ থেকে পয়ঃনিষ্কাশনের কাজটা সিটি করপোরেশনে হস্তান্তর করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

তিনি আরও বলেন,স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঢাকা ওয়াসার অনুরোধে কারিগরি কমিটিসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। বিবিধ কারণে ওই সময়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সাত হাতে না করে একহাতে রাখার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হন। ঢাকা ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব হস্তান্তর করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেন তিনি।

এমডি তাকসিম জানান, ২০১৯ সালে মন্ত্রী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করার বিষয়ে নানা বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রদের নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী গত ২৬ নভেম্বর একটি পরামর্শ সভা করেন এবং সিদ্ধান্তে আসেন যে, ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা দুই সিটি করপোরেশনের কাছে ন্যস্ত হওয়া সমীচীন। এ ধারাবাহিকতায় গত ৩১ ডিসেম্বর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়।

তাকসিম এ খান আরও বলেন, আমাদের সব টেকনিক্যাল সাপোর্ট আমরা সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দেবো। আইন অনুযায়ী এই দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। ১৯৮৮ সালে জারি হওয়া একটি প্রজ্ঞাপনে ভুল ছিল। একটি ভুল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার বৃষ্টির পানি অপসারণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির পানি অপসারণের দায়িত্ব আসলে ঢাকা ওয়াসার ছিল না। দেশের অন্যান্য শহরেও এই দায়িত্ব ওয়াসার কাছে নেই। সেগুলোতেও সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনই দায়িত্বটি পালন করছে।
 
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ওয়াসার ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহমুদ হোসেন, পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেম, পরিচালক (কারিগরি) শহিদুল ইসলামসহ ওয়াসার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এএসএস/এইচকে