করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ও ওয়াশ খাতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

রোববার (৩০ মে) আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বরাদ্দের বিষয়ে বাজেটপূর্ব এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

এ সময় বক্তারা মহামারির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধানের জন্য পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনে আরও বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত দেন।

তারা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধানটি সকলের জন্য পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি বিশেষত, পানি ও সাবানের ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা নিশ্চিত করার সঙ্গে সম্পর্কিত। এ জন্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে তাত্ক্ষণিক বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, ওয়াশ অ্যালায়েন্স ও এমএইচএম নেটওয়ার্কের যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এতে বক্তারা বলেন, জনসমাগমস্থল, হাট-বাজার, বাস টার্মিনাল, সরকারি ও বেসরকারি অফিসসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য হাত ধোয়ার স্থানে পানি, হ্যান্ড ওয়াশ বা সাবানের ব্যাপক স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শহর কিংবা গ্রামের পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় কার্যকরী নানা সুযোগ-সুবিধাসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা খুবই প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, কোভিড-১৯ অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করেছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনার উপকরণ জোগানে সামর্থ্য হারিয়েছে। বিশেষ করে, নারীরা মাসিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। আসন্ন বাজেটে স্যানিটারি ন্যাপকিনে অতিরিক্ত ভ্যাট এবং ট্যাক্স কর্তন এবং তা সামর্থ্যের মধ্যে রাখার জন্য মূল্য হ্রাস করাকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

অর্থনীতিবিদ এবং পিপিআরসির চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অবশ্যই জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে  টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৬ অর্জনের জন্য ২০২১-২০২২ জাতীয় বাজেটে যথাযথ মনোযোগ দিতে হবে। চলমান মহামারির কারণে ওয়াশ খাতে বাজেটের ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। এসব অসমতা দূর করে আগামী জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজিএস) অর্জনের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।

ওয়াটারএইড ও ইউনিসেফের সহযোগিতায়, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ  প্রশংসনীয়। কারণ, ওয়াশ খাতে ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এ সময় ২ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা হয়েছে। বিগত বছরগুলোর বাজেটে এ খাতে আর্থিক বরাদ্দের ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপির অধীনে ওয়াশ খাতে ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ করা হয়েছিল।

বক্তারা জানান, ভৌগলিক অবস্থান বিচারে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসমতা। গ্রামাঞ্চল, চর, পার্বত্য অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের অত্যধিক প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও বিগত বছরগুলোতে শহর ও মহানগরগুলো তুলনামূলকভাবে বরাদ্দের শতাংশ বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মিকস জরিপ ২০১৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের উন্নত স্যানিটেশনের সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত জ্ঞান যথেষ্ট থাকলেও হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধির চর্চার হার খুব কম।

জেএমপির ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের হাত ধোয়ার স্থানে সাবান ও পানির সুবিধা রয়েছে। দেশে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত ধারণা যথেষ্ট থাকলেও এর চর্চা খুব কম। সবার জন্য হ্যান্ড হাইজিনের প্রয়োজনের পাশাপাশি দেশব্যাপী এর প্রচারণারও চালানো দরকার বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

একে/এসকেডি