বরিশালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যুবককে মারধর করে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে একটি চক্র। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পাঁচ লাখ টাকা দাবী করলেও নগদ ২৫ হাজার টাকা ও দেড় লাখ টাকা মূল্যের অলংকারের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে দাবী করেছেন অপহৃত যুবকের স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন।

বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের সিংগা গ্রামে সোমবার (১৪ জুন) মাঝরাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফাতেমা ইয়াসমিন গৌরনদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন। 

তিনি জানান, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে আসলে কী ঘটেছিল ওই রাতে। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ওই যুবককে তুলে নিয়েছিল তারা বাহিনীর কেউ নন।

থানায় দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সিংগা গ্রামের চন্দ্রহার বাজারের মুদি ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন (৩৭) সোমবার রাতে পরিবারের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত দেড়টার দিকে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিল কেউ। তারা নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে দরজা খুলতে বলেন।

শাহাদাতের স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, ডিবি পরিচয় পাওয়ার পরে দরজা খুলে দিলে পাঁচ ব্যক্তি ঘরে ঢুকে আমার স্বামীকে মারধর করতে থাকে। এতে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এক পর্যায়ে ডিবি পরিচয় দেওয়া লোকজন আমার স্বামীকে হ্যান্ডক্যাপ পড়িয়ে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায়। রাত সোয়া ২টার দিকে আমি চন্দ্রহার বাজারে গিয়ে বাজারের দোকানদারদের ঘুম ভাঙিয়ে ঘটনা জানাই।

ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, রাত আনুমানিক পৌনে ৩টার দিকে ০১৮৯০৭৯৭৮৯০ নম্বর থেকে আমার স্বামী শাহাদাত হোসেনের বাসায় রেখে যাওয়া মোবাইল নম্বরে কল করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ও রাতের মধ্যে টাকা নিয়ে চন্দ্রহার বাজারের সেতুর কাছে থাকতে বলে। টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে বলে জানায়।

অপহরণকারীদের সঙ্গে সময় চেয়ে কান্না করে বলি রাতে এত টাকা জোগাড় করতে পারব না। তবে সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা নিয়ে ব্রিজের ঢালে অপেক্ষা করব। একথা বলার পর লাইন কেটে দেয়।

ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, আমি ও আমার দেবর নাসির উদ্দিন ঘরে থাকা ২৫ হাজার টাকা ও আমার গলার চেইন, কানের দুল নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। মঙ্গলবার (১৫ জুন) ভোর ৬টার দিকে গাড়িতে এসে টাকা ও অলংকার নিয়ে বাজারে লোকজনের উপস্থিতিতে গাড়ি থেকে আহত অবস্থায় শাহাদাতকে ফেলে যায়। আমরা তাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি।

অপহৃত শাহাদাতের বরাত দিয়ে ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, স্বামী আমাকে বলেছে, গাড়িতে তুলেই তার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। তাকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/ওএফ