চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় করোনা সংক্রমণের হার দিনদিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে করোনা হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীর ভর্তি সংখ্যাও বাড়ছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের (জুন) শেষ ১৬ দিনে ফটিকছড়িতে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২১৬ জন। একই সময়ে হাটহাজারীতে শনাক্তের সংখ্যা ১৭১। হাটহাজারীতে এ সময়ে মারা গেছেন ৪২ জন, ফটিকছড়িতে ১৩ জন।

সোমবার (২১ জুন) চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ড  উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। আগামীকাল মঙ্গলবার জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির বৈঠক আছে। বৈঠকে উপজেলাগুলোতে লকডাউন দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

উপজেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার ওঠা-নামা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সিভিল সার্জন বলেন, চট্টগ্রামের সব স্থানেই করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ১৫টিতে রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়া জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ শয্যায়ও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

সর্বশেষ সোমবার (২১ জুন) ফটিকছড়ি উপজেলায় শনাক্ত হয়েছেন ২১ জন। হাটহাজারীতে শনাক্ত হয়েছেন ১৫ জন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২১ জুন) পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ হাজার ১৭১ জন।  এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে আছেন ৪৪ হাজার ২২৮ জন। চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯৪৩ জন। ফটিকছড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা ১২৬৩ জন, হাটহাজারীতে ২৭১৬ জন।

শুধু ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলা নয়, এখন গ্রামাঞ্চলেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেশি। গতকাল রোববার (২০ জুন) পর্যন্ত জেলায় নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ২৪.১৭ শতাংশ। অন্যদিকে, নগরে (চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এরিয়া) পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১০.১৪ শতাংশ।

রোববার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬৫৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ৪৬০ ও জেলায় ১৯৭ জন। নগরে শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুর হার ১.০৪ শতাংশ। জেলায় শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুর হার ১.৬৬ শতাংশ।

ফটিকছড়িতে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাবিল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন,  হঠাৎ করে এখানে সংক্রমণ বেড়েছে। আমাদের ২০ শয্যার করোনা হাসপাতালে ২৪ রোগী ভর্তি আছেন।

সংক্রমণ বন্ধে নেওয়া উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন করতে মাইকিংসহ জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি ফটিকছড়ি উপজেলা। সেখানকার অনেক মানুষ গোপনে ভারতে যাতায়াত করেন। এ কারণে সেখানে করোনায় আক্রান্তের হার বেশি বলে মনে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষ মাস্ক ছাড়া যত্রতত্র ভ্রমণ করছেন। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন প্রবণতা নেই। যে কারণে হাটহাজারী, ফটিকছড়িসহ উপজেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। যেসব স্থানে আক্রান্তের হার বেশি সেসব জায়গায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রশাসনকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব।

কেএম/এমএআর