রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তরে সম্পৃক্ত নয় জাতিসংঘ
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা ভাসানচরে নিতে চায় সরকার। তবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে পর্যাপ্ত তথ্য এবং এতে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে অথবা শরণার্থী শনাক্ত প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সংস্থাটির কাছে পর্যাপ্ত তথ্যও নেই।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ অফিস।
এতে বলা হয়, ভাসানচরে প্রারম্ভিক স্থানান্তরের কাজ আগামী কিছুদিনের মধ্যে শুরু করার সম্ভাবনা বিষয়ক কিছু প্রতিবেদন সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত রয়েছে। ওই স্থানান্তরের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে অথবা শরণার্থীদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন প্রাসঙ্গিক, নির্ভুল এবং হালনাগাদ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তথ্যসমৃদ্ধ ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ বরাবরই আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘ এ বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করছে।
ইতোপূর্বে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে 'ওই দ্বীপে শরণার্থী স্থানান্তর স্বেচ্ছা-নির্ভর হবে'। এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিবৃতিতে সরকারকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।
সংস্থাটির ভাষ্য, যেসব শরণার্থী ভাসানচরে স্বেচ্ছায় স্থানান্তরিত হতে চাইবে ওই দ্বীপে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার নিশ্চয়তাসহ মূল ভূখণ্ডে চলাচলের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ গুরুত্বারোপ করেছে।
এটি ভাসানচরে একটি কার্যক্ষম ও নিরাপদ জনপদের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভাসানচর প্রকল্প ঘোষণার সময় থেকে এ পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ গঠনমূলক আলোচনার প্রস্তাব রেখেছে। সরকারের সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত, পদ্ধতিগত ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিবেচনা করেছে। এ আলোচনা চালিয়ে যেতে জাতিসংঘ এখনও আগ্রহী।
এছাড়াও ভাসানচরে যেকোনো স্থানান্তরের আগে সর্বাঙ্গীন সুরক্ষা বিষয়ক একটি প্রায়োগিক মূল্যায়ন (টেকনিক্যাল প্রোটেকশন অ্যাসেসমেন্ট) করার জন্য জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের এ নিরপেক্ষ মূল্যায়নে শরণার্থীদের বাসস্থান হিসেবে ভাসানচরের নিরাপত্তা, প্রায়োগিক সম্ভাব্যতা, স্থায়িত্ব, শরণার্থীদের সুরক্ষা কাঠামো এবং তাদের সহায়তা ও সেবা নেওয়ার অবকাঠামোর সার্বিক পর্যালোচনা করা হবে।
জাতিসংঘ বলছে, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতিসংঘ প্রায়োগিক এবং সুরক্ষা বিষয়ক মূল্যায়ন করার জন্য প্রস্তুত। জাতিসংঘ সরকারের ভাসানচর প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত হতে পারবে কি না সেটা নির্ধারণে এ মূল্যায়নগুলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
যদি তাই হয়, তবে সরকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা-দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিকল্পনা এবং বাজেট প্রস্তুতকরণে আরও কিছু কার্যক্রমের প্রয়োজন হবে।
এদের সবার সহযোগিতায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সেবা কার্যক্রম সম্ভব হয়েছে।
কক্সবাজারে বসবাসরত প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য কার্যকর ও সুদক্ষ মানবিক সহযোগিতা দিতে জাতিসংঘ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে সংস্থাটি।
জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশের সরকার ও এদেশের জনগণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা এবং আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে যে উদারতা, মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দিয়েছে তার জন্য জাতিসংঘ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে যে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে তাতে অংশীদারিত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি অটুট রয়েছে।
রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সরকার।
জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে এ চরের ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য সেখানে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগে থেকে অবস্থান করছে চার লাখের মতো। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
এনআই/এসএম