বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে ডাক অধিদপ্তর

আজ বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তি দিবস। পাকিস্তানের মিলানওয়ালী কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করেন। দিবসটি উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে ডাক অধিদপ্তর।

শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার বেইলী রোডের সরকারি বাসভবনের দপ্তরে এই স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি দশ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট ও একটি উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত এবং পাঁচ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ড উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি মন্ত্রী এ বিষয়ক একটি সিলমোহর ব্যবহার করেন।

পরে বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তি দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য একটি অধ্যায়। ২৪ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের মহাকাব্যের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বেশির ভাগ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় তার আপসহীন নেতৃত্ব বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। একজন বঙ্গবন্ধু ছিলেন বলেই,বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে।

ডাক মন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দি শিবির থেকে টানা ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তিলাভ করেন। এরপর থেকেই দিনটি বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকহানাদার বাহিনীর গণহত্যা চলাকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের মিলানওয়ালী কারাগারে নির্জন কক্ষে বন্দি অবস্থায় রাখা হয়। যুদ্ধের পরেও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানীদের হাতে বন্দি ছিলেন। পরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যাপক কূটনৈতিক চাপ এবং বিশ্ব শীর্ষ নেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি খুব ভোরে লাহোর বিমানবন্দর থেকে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমানে উঠিয়ে বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান করেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির খবর প্রথম প্রচার করে রেডিও পাকিস্তান। এতে বলা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে লাহোর বিমানবন্দর থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার গন্তব্য স্থল সম্পর্কে রেডিও পাকিস্তান কোনো খবর না দিয়ে অজ্ঞাত রাখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানি বন্দি শিবির থেকে বহুল প্রত্যাশিত মুক্তির খবর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিবিসি নিয়মিত অনুষ্ঠান স্থগিত করে লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরে শেখ মুজিবুর রহমানের অবতরণের খবর লাইভ প্রচার ও বিশেষ বুলেটিন প্রচার শুরু করে। বিমানবন্দরে তাকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য ছুটে যান ব্রিটেনের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও লেবার পার্টির প্রধান হ্যারল্ড উইলসন (পরবর্তীতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী) এবং বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তারা। বঙ্গবন্ধুর অবতরণের খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে লন্ডনের রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষের ঢল।

এইচএন/এমএইচএস