চট্টগ্রামে ঘটক ও পাত্রী সেজে অসংখ্য মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গচ্ছি নয়া হাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি  ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।

গ্রেফতার হওয়া দু'জন হলেন- রাউজান উপজেলার গচ্ছি এলাকার মৃত মো. হারুনের পুত্র ওকার উদ্দিন ওরফে আরিফ (৩৬) ও তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার ওরফে শিরিন আক্তার ওরফে শেলি (৩২)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওকার উদ্দিন ও তার স্ত্রী সেলিনা আক্তারসহ একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘ দিন ধরে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে সুন্দরী মেয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। এক প্রবাসী ভিকটিম এই চক্রের কাছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা হারান। এরপর ১৬ জুন এ বিষয়ে রাউজান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ঐ প্রবাসী। মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার চক্রের মূল অভিযুক্ত স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।  

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। এ সময় ওকার ও সেলিনা তাদের প্রতারণার অভিনব কৌশলের কথাও প্রকাশ করেন। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে স্বামী ওকার উদ্দিন তার এক সহযোগীকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ডিভোর্সড বা স্ত্রী মারা গেছে এমন বিত্তশালী মানুষ, বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ও ধনাঢ্য মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন। তারপর কৌশলে তাদের সঙ্গে পরিচিত হতেন। 

ঘনিষ্ঠতার একপর্যায়ে টার্গেট ব্যক্তিদেরকে ওকার জানাতেন যে, তাদের হাতে সুন্দরী ও বড়লোক বাবার মেয়ে পাত্রীর সন্ধান রয়েছে।  চাইলে পাত্রী দেখানো ও বিয়ের উদ্যোগ নিতে পারেন। টার্গেট ব্যক্তি রাজি হলে প্রতারকেরা তাদেরকে বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বেশকিছু পাত্রী দেখাতেন ও কৌশলে জেনে নিতেন কোন পাত্রী পছন্দ হয়েছে।

কয়েকদিনের মধ্যেই টার্গেট ব্যক্তির মোবাইলে সেই পছন্দকৃত পাত্রীর পরিচয় দিয়ে কল করতেন প্রতারক চক্রের সদস্য সেলিনা (ওকার উদ্দিনের স্ত্রী)। কয়েকদিন অন্তরঙ্গ কথা চালিয়ে যাওয়ার পর শুরু হতো সেলিনার প্রতারণা। প্রথমে সেলিনা বলতেন, তিনি তার মায়ের মোবাইল থেকে কথা বলেন, তাই সবসময় কথা বলা সম্ভব হয় না। তাই জরুরি ভিত্তিতে তার একটি মোবাইল ফোন কেনা প্রয়োজন। কয়েকদিন পর বলতেন যে, তিনি অসুস্থ, ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, বিভিন্ন ব্যয়বহুল টেস্ট করতে হবে, টাকা দরকার। এভাবে বিভিন্ন অজুহাতে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিতেন। 

এছাড়াও কথা বলার সময় অন্তরঙ্গ আলাপ রেকর্ডও করে রাখতেন সেলিনা। পরে ভিকটিমরা যখন বুঝতে পারত যে প্রতারিত হয়েছে,  তখন তাদেরকে হুমকি দেওয়া হতো। যদি তারা এ বিষয়ে পুলিশ কিংবা অন্য কাউকে কিছু বলেন, তাহলে তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে রেকর্ড করা অন্তরঙ্গ কথোপকথন পাঠিয়ে দেওয়া হবে। 

পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য তারা মোবাইল কলের বদলে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে যাবতীয় যোগাযোগ ও আলাপচারিতা করতেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতারক চক্রের মূল অভিযুক্ত ওকার উদ্দিন নিজেও ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দিন দুবাই প্রবাসী ছিলেন। কিন্তু ভাগ্য ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৪ সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর মেয়ে সেলিনা আক্তারকে বিয়ে করেন। স্বামী-স্ত্রী এবং অন্য কয়েকজন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন অভিনব এই প্রতারণার ফাঁদ।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা এই চক্রটির গতিবিধি মনিটর করে আসছিলাম। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি মামলা হওয়ার পর বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চক্রে জড়িত অন্যান্যদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

কেএম/ওএফ