দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণাসহ উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সুপেয় পানির স্থায়ী সমাধান, উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন, সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ ও জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণ চেয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের সংসদ সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও, ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের আন্তরিকতার অভাব ও মাঠ পর্যায়ে অব্যবস্থাপনার কারণে উপকূলীয় মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংসদ সদস্যদের।

রোববার (২৭ জুন) রাজধানীর কৃষি ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ উপকূলের জীবন-জীবিকায় করণীয় নির্ধারণে সংসদ সদস্যদের বিশেষ কনভেশনে গৃহীত ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে এসব দাবি তোলা হয়।

অনুষ্ঠানে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের সংসদ সদস্যরা ত্রাণের বদলে টেকসই নির্মাণের ওপর জোর দেন। তারা মন্ত্রী পর্যায় থেকে শুরু করে আমলাদের আন্তরিকতাসহ মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরতদের আন্তরিকতার অভাবে টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় সাইক্লোন ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ও দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেন।

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় সাংসদদের ভাষ্য, ওই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে বর্ষা মৌসুমে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিলেও অজ্ঞাত কারণে সেসব আটকে আছে। কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে সেসব খুব ধীরগতিতে চলছে। বিশেষ বরাদ্দের দাবি থাকলেও জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি বলেও দাবি সংসদ সদস্যদের।

খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, আমাদের দাবি আদায়ে কথা বলতে হবে, চুপ করে থাকলে হবে না। হাজার হাজার কোটি টাকা আমাদের অবকাঠামো করছি অথচ এক রাতের সিডর বা আইলায় আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। আমরা সরকারের কাছে বলব, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই, আমাদের ত্রাণের দরকার নাই। 

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র বলেন, উপকূলীয় মানুষগুলোকে বাঁচাতে হলে টেকসই বাঁধ নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। আমরা শুনে আসছি ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়ন হচ্ছে, কিন্তু আমরা উপকূলবাসীতো তার সুফল দেখছি না। টেকসই বাঁধ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলবাসীর সমস্যার সমাধান আসবে না।

পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা বলেন, উপকূলের জন্য যে বরাদ্দ হচ্ছে সেটায় কোথায় যাচ্ছে কেউ আওয়াজ তুলছে না। প্রধানমন্ত্রী দিচ্ছে, কিন্তু সুষম বণ্টন হচ্ছে না। আমি তদবির করতে পারি না বা জানি না। তাই আমার এলাকার উন্নয়ন হবে না? আমরাতো ত্রাণ চাই না, আমরা টেকসই বাঁধ চাই।

খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল সালাম মুর্শেদী বলেন, উপকূলের সমস্যা সমাধানে মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এগোতে হবে। 

বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আমিরুল ইসলাম মিলন বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। বাজেট আছে, বরাদ্দ আছে; কিন্তু শেষ স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছায় না। 

সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, মাঠ পর্যায়ে অব্যবস্থাপনার কারণে উপকূলীয় মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার অভাব নেই, কিন্তু ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। 

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের সমস্যা সমাধানে সংসদ সদস্যদের কনভেশনে ৭টি ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। এগুলো হলো-

১) টেকসই বাঁধ নির্মাণে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ তহবিল গঠন করতে হবে।
২) জাতীয় বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থ বাস্তবায়নে সমন্বয় করে উপকূলীয় এলাকার জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে সম্পৃক্ত করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। 
৩) জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে সেখনকার জীবন-জীবিকা ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৪) লবণাক্ততার আগ্রাসনের শিকার উপকূলের সুপেয় পানির সংকট নিরসনে স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মৎস্য ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। 
৫) বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬) ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাগরতীরবর্তী এলাকা সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সুপার ড্রাইভওয়ে নির্মাণ করতে হবে।
৭) উপকূলের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অবিলম্বের হাওড় উন্নয়ন বোর্ডের মতো উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।

এনআই/এইচকে