সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মেয়র তাপস

• খোকন বলেছিলেন মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন তাপস 
• জবাবে তাপস বলছেন ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এসব বলেছেন খোকন 
• খোকনের অভিযোগে আসে মধুমতি ব্যাংক প্রসঙ্গও 
• দায়িত্বশীল জায়গা থেকে মন্তব্য সমীচীন নয়, মনে করছেন তাপস 
• ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে সাবেক ও বর্তমান মেয়রের দ্বন্দ্ব শুরু 
• দোকানের বৈধতা দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে খোকনের বিরুদ্ধে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের গতকালের বক্তব্যের প্রসঙ্গে সংস্থাটির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ডিএসসিসির সাবেক মেয়র যা বলেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। খোকন বলেছিলেন, মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছে তাপস। 

আজ (রোববার) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) নগর ভবনের দক্ষিণ প্রান্তে অযান্ত্রিক যানবাহনের নিবন্ধন প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এমন মন্তব্য করেন তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। তবে আমার এই দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কোনো ধরনের মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

সাঈদ খোকনের উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে ফজলে নূর তাপস বলেন, দেশের সকল বেসরকারি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি সংস্থাগুলো থেকে আমানত সংগ্রহ করে। মধুমতি ব্যাংকও তেমন একটি বেসরকারি ব্যাংক। তারাও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে আমানত সংগ্রহ করে চলেছে। সুতরাং এখানে কোনো আইনবর্হিভূত কিছু নেই। দুর্নীতি তখন হয় যখন কোনো কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কমিশন নেওয়া হয়। দুর্নীতি তখন হয় যখন উৎকোচ গ্রহণ করা হয়, সরকারি প্রভাব খাটিয়ে অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ করা হয়, তখন দুর্নীতি হয়। যে যতই তার ব্যক্তিগত আক্রোশের জায়গা থেকে নিজের মতো করে মন্তব্য করুক না কেন, আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে। 

এর আগে গতকাল ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ ডিএসসিসির অভিযানে উচ্ছেদ হওয়া দোকান মালিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে এক মানববন্ধনে সংস্থাটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

সম্প্রতি গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান মেয়রের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নিজের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর দোকান মালিকদের ওই মানববন্ধনে উপস্থিত হন সাবেক মেয়র খোকন। 

মানববন্ধনে তিনি বলেন, তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন, তারপর চুনোপুটির দিকে দৃষ্টি দিন। মেয়র তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন। এই শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং করছেন। অপরদিকে অর্থের অভাবে করপোরেশনের গরীব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। 

সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, ২য় ভাগের ২য় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন খোকন। 

সাম্প্রতিক বৈরিতার শুরু যেভাবে 
ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ অবৈধ দোকান উচ্ছেদে গত ৮ ডিসেম্বর মার্কেটে অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি। প্রথমদিনের অভিযান দোকানিদের বাধার মুখে পড়লেও ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৪১টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। 

দোকানের বৈধতা দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৯ ডিসেম্বর সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। সাঈদ খোকন ছাড়াও ডিএসসিসির সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদকে মামলায় আসামি করা হয়।

আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ রয়েছে। 

মামলার আবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২১ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর এ ব্লকে নির্মিত নকশাবহির্ভূত স্থাপনাগুলো বৈধতা দেওয়ার কথা বলে আসামিরা বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৫ টাকা নিয়েছেন। তবে পরে তাদের সেসব দোকান উচ্ছেদ হলেও তারা টাকা ফেরত পাননি।

ব্যবসায়ীদের দাবি, উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং সিটি করপোরেশন সভার মাধ্যমে এসব দোকানের বৈধতা দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। প্রতিটি দোকানের বিপরীতে ট্রেড লাইসেন্স এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া আদায় করেছে ডিএসসিসি। কিন্তু এই দোকানগুলো অবৈধ উল্লেখ করে সেগুলো উচ্ছেদে নেমেছেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

যে উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে এত দ্বন্দ্ব

তিনি অভিযোগ করেন, মেয়র ফজলে নূর তাপস ব্যবসায়ী নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলুকে দিয়ে নোংরামি করাচ্ছে। যার মাধ্যমে তার নিজের ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

সম্প্রতি ডিএসসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের (এসটিএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সুশাসিত ঢাকা আমাদের ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। সুশাসিত ঢাকা ছাড়া উন্নত ঢাকা গড়া সম্ভব নয়। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি এতে হেয় প্রতিপন্ন হন, লজ্জিত হন, সেটা সেই ব্যক্তির বিষয়।

তিনি এসময় বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কার্যক্রম চলমান থাকবে। নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে চলমান অভিযান কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, সকল অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। কোনভাবেই এই কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। আমরা কোনোভাবেই সেটাতে আপস করব না।

এএসএস/এনএফ