কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী পাঠাগার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী

ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯১ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে হবিগঞ্জ সদরের পুরাতন হাসপাতাল রোডে দ্বার উন্মোচন হচ্ছে ‘কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী পাঠাগারের’।

রোববার (১০ জানুয়ারি) এ পাঠাগারটি দ্বার উন্মোচন করবেন মানিক চৌধুরীর স্ত্রী বেগম রোকেয়া চৌধুরী। পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনটিতে একইসঙ্গে থাকছে পাঠাগার ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করবে। পাঠাগারটি হবিগঞ্জ জেলার শিক্ষার্থীসহ সবাইকে বই পাঠে অভ্যস্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

ভবনটির দ্বিতীয় তলায় থাকছে এ পাঠাগার। যেখানে স্থান পেয়েছে দেশ-বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তি ও লেখকদের সংগৃহীত বই। এছাড়া ভবনটির তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় প্রস্তুত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। যেখানে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংগৃহীত বিভিন্ন স্মারক ছাড়াও থাকবে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন চিঠি ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও তথ্যচিত্র। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চা বাগানের শ্রমিকদের তীর-ধনুক ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণও সংরক্ষণ করা হবে এ জাদুঘরটিতে।

কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী পাঠাগার এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুর ওয়ারলেসের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি আমার বাবা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী বুকপকেটে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এ গল্প আমি আমার মায়ের কাছে শুনেছি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব আমি পালনের চেষ্টা করেছি।

কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী পাঠাগার নিয়ে পাঠাগারটি সভাপতি ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও পাঠাগার সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এখনই স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি একই ছাদের নিচে প্রবীণ ও নবীনদের দেশ গড়ার কাজে সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি।

ইতোমধ্যেই জাদুঘর ও পাঠাগারটি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয়জনে পরিণত হয়েছে বলেও জানান হবিগঞ্জ নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা মর্তুজ আলী।

এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ৭ মার্চ জাদুঘর ও পাঠাগারটির ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভবনটি নির্মাণ বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ সরকার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এবং এটির নকশা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থপতি নুরুল করিম দিলু।

কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী হবিগঞ্জ শহরে ১৯৩৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যায়নকালীন ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করতে গিয়ে তিনি কারাবন্দি হন। এরপর ঐতিহাসিক ছয় দফা সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ও কারাভোগ করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চুনারুঘাট, বাহুবল, শ্রীমঙ্গল আসন থেকে তৎকালীন জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি তিনি পেলে শুরু করেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। সে সময় তিনি তার নির্বাচনী এলাকার চা-শ্রমিকদের নিয়ে গঠন করেন বিশাল তীরন্দাজ বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অবশেষে ১৯৯১ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শেষ হয় এই রাজনৈতিকের বর্ণাঢ্য জীবন।

২০১৫ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পদকে (মরণোত্তর) কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীকে সম্মানিত করেন।

এইচএন/এসএম