গামছা দিয়ে ঢাকা সন্তানের নিথর দেহ, পাশেই শোকে স্তব্ধ মা হালিমা/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

ঘড়িতে দুপুর ১টা বেজে ৪৫ মিনিট। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশে গামছা দিয়ে ঢাকা ২ বছর ৬ মাস বয়সী শিশুর নিথর দেহ। পাশেই বসা মা হালিমা বেগম বাকরুদ্ধ। সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব হালিমা কান্নার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন।

চাচা ফরহাদ চিৎকার করে কাঁদছেন আর বলছিলেন, ‘সকাল বেলা আমাকে বাব্বা বাব্বা বলে কেউ আর ঘুম ভাঙাবে না’। কে আমার সকালে ঘুম ভাঙাবে?

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) ছোলা-বুট জাতীয় কিছু গলায় আটকে যায় শিশু হাসানের। পরে অচেতন অবস্থায়  শিশুটিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে চাচা ফরহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসান ও হোসাইন যমজ দুই ভাই। তাদের বয়স এখন আড়াই বছর। তাদের বাবা আমার বড় ভাই ফকরুল ইসলাম সৌদি আরব প্রবাসী। আমি দোকানে ছিলাম, খবর পেয়ে বাসায় এসে দেখি হাসান অচেতন অবস্থায় আছে। তাড়াতাড়ি ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলাম। চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান আমার ভাতিজা আর নেই। সব এলোমেলো হয়ে গেল। ভাইয়াকে কী জবাব দেব আমি? কিছুই বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, আমার মা বুট ভাজা খাচ্ছিলেন। এ সময় হাসান এক মুঠো বুট মুখে দিয়ে দৌড়ে বাইরে চলে যায়।কিছুক্ষণ পর তাকে গোসল করাতে নিয়ে গেলে অচেতন হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কী থেকে কী হলে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না।

সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা হালিমা বেগম

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাসা কামরাঙ্গীরচর থানার খোলামোড়া ঘাটের ৯ নম্বর গলিতে। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানা এলাকায়। 

শোকে স্তব্ধ মা হালিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে, দুপুরে হোসাইনকে আমি গোসল করিয়েছি। পরে হাসানকে গোসল করাতে নিলে দেখি নিশ্বাস নিতে পারছে না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সে অচেতন হয়ে পড়ে। পরে ওর চাচাদের খবর দিলে তাড়াতাড়ি মেডিকেলে নিয়ে আসি। কিন্তু ততক্ষণে আমার ছেলে মারা যায়। আমি কী জবাব দেব আমার স্বামীকে? আমি তো তোমার সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার বুকের মানিককে কেন কেড়ে নিলে আল্লাহ! কী পাপ করেছিলাম আমি?

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি খুব বেদনাদায়ক। ফুটফুটে একটি শিশুর এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। আমরাও তো মানুষ আমাদেরও সন্তান আছে।

তিনি আরও জানান, পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, ছোলা বুট জাতীয় কিছু গলায় আটকে অচেতন হয়ে পড়ে শিশুটি। পরে ঢামেকের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট থানাকে বিষয়টি জানিয়েছি।

এসএএ/এসকেডি