নিখোঁজ সাজ্জাদ হোসেন সজিব (২২)

সাজ্জাদ আমার আদরের ভাগ্নে। ওর কপালে কী ঘটেছে আল্লাহই ভালো জানেন। আগুনের ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেছে। যত সময় যাচ্ছে ততই ক্ষীণ হচ্ছে আশা। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ৪৯টা লাশ এসেছে বলে শুনেছি। এগুলোর মধ্যে ভাগ্নের মুখ খুঁজতে এসেছি আমি। আল্লাহ যেন এর মধ্যে আমার সাজ্জাদকে না রাখেন। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গের সামনে ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন মাহফুজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার এক ভাই ভাগ্যগুণে বেঁচে ফিরেছেন। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মাহফুজের ২২ বছর বয়সী ভাগ্নেকে।  

শুক্রবার (৯ জুলাই) বিকেল ৫টায় মাহফুজুর রহমান বলেন, আমার ভাগ্নে সাজ্জাদ হোসেন সজিব (২২) এবং ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম ফ্যাক্টরির ৪ তলায় কাজ করত। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৫টার দিকে তারা একসঙ্গে ভবনের চার তলায় ছিল। ভাগ্নে সাজ্জাদ নাশতা খেতে বাইরে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হয়। ভাই থেকে যায়। এরপরই হঠাৎ চারদিক কালো ধোয়াঁয় ছেয়ে যায়। জ্ঞান হারায় মঞ্জুরুল। 

মাহফুজুর বলেন, এরপর জানালার কাছ থেকে মঞ্জুরুলকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু ভাগ্নে সাজ্জাদকে আর কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। তার মোবাইলও বন্ধ। নিখোঁজ ভাগ্নে সাজ্জাদের বয়স আনুমানিক ২২ বছর। সে অবিবাহিত। 

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় কারখানার ৪র্থ তলার পরিস্থিতি কী ছিল- জানতে চাইলে মাহফুজুর বলেন, সাধারণ দিনের মতোই ছিল সবকিছু। কাজ চলছিল সব ফ্লোরে। সে সময় ৪২ থেকে ৪৫ জনের মতো লোক ওই ফ্লোরে ছিল বলে আমার ভাই মঞ্জুরুল জানিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস ফ্যাক্টরিতে (সেজান জুসের কারখানা) আগুন লাগে। এ ঘটনায় আজ (শুক্রবার) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অন্তত ৫২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত  কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যান ৩ জন।
 
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু শ্রমিক আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হবে। 

আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ শাহ-আলম বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে কারখানার চারতলায় আবারও আগুন বাড়তে থাকে। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৫ ও ৬ তলায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রবেশ করতে পারেনি। ওই দুই তলায় আরও মরদেহ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এআর/এসআই/এসএএ/এইচকে/জেএস