তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ | ফাইল ছবি

বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকার পরিচালনায় সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পরিকল্পনা কমিশনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে ‘এনগেজমেন্ট ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমিক (ইডিজিই)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে। সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিপিপিতে দেখা গেছে, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৮৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসাবে বিশ্ব ব্যাংক থেকে পাওয়া যাবে দুই হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। 

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডিজিটাল সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আওতায় ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ডিজিটাল সরকার এবং ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য ডিজিটাল প্লাটফর্ম স্থাপন, ডিজিটাল অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান, একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে সামনে রেখে দেশের যুবসমাজকে সময়োপযোগী কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এর বাইরেও বেসরকারি খাত ও বাজারকে ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য প্রস্তুতকরণ, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট ফর ফ্রনটেয়ার টেকনোলজি (শিফট) প্রতিষ্ঠা, ক্লাউড কম্পিউটিং প্লাটফর্ম স্থাপন, এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচারকে (বিএনডিএ) পরবর্তী ধাপে উন্নীতকরণ, একটি বণ্টনযোগ্য এবং সংহত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম স্থাপন, ডিজিটাল অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে মৌলিক দক্ষতা অর্জন, চাকুরীর সংস্থান এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও সমন্বয় ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি আরও জানান, প্রকল্পের বিষয়ে কিছু সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। এগুলো ঠিকঠাক করে আবারও পাঠালে তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় পাঠানো হবে।

পিইসি সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ও ইনোভেশন সেন্টার স্থাপন করে প্রায় ৮০ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাসহ আরও বিপুল জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ প্রকল্পের আওতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়িত এলইসিটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্থাপিত সুবিধাদি স্কিলআপ করে সাইবার ঝুঁকি নিরসনে কাজ করা হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম করে এগুলোকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা এবং ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে।

আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ পিইসি সভায় বলেন, প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে এর সংশ্লিষ্ট সেক্টরের এসএমই খাতগুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেক কম্পোনেন্টের জন্য টার্গেটেড জনগোষ্ঠী এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে।

পিইসি সভয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পটি গ্রহণের বিষয়ে দাতা সংস্থার সম্মতি রয়েছে। ফাইন্যান্স এগ্রিমেন্টের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। দাতাসংস্থার সম্মতিপত্র ইআরডির অনাপত্তি ডিপিপিতে সংযোজনের বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়।

সভায় কার্যক্রম বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, প্রকল্পে প্রস্তাবিত পরামর্শকের সংখ্যা অনেক বেশি। পরামর্শকের সংখ্যা কমানোর বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়। এছাড়া অফিস বিল্ডিং ভাড়া বাবদ প্রায় ২৩ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে যা কমানো প্রয়োজন বলে সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান বিশ্বে সবকিছু ডিজিটাল হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের সব সিস্টেমকে ডিজিটালাইজড করতে হবে। এখনও আমাদের অনেক সেক্টর সেভাবে ডিজিটালে প্রবেশ করতে পারেনি। আমি আশা করছি, প্রকল্পটি সরকারের কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করে কাজে আরও গতি এনে দেবে।

এসআর/এমএআর/