দায়িত্ব না নিলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন কেন, প্রশ্ন আইজিপির
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমাদের দেশে এখন বড় সমস্যা হচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং’। এ কিশোর গ্যাং কে মোকাবিলা করতে হবে। সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে, কারণ কিশোর-কিশোরীরাই কিন্তু আগামী দিনের বাংলাদেশ তথা, ২০৪১ সালের ধনী দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সেই শিশুরা ড্রাগ নিয়ে কিংবা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে ধ্বংস হয়ে যাক সেটা আমাদের কোনো মতেই বরদাশত করা যাবে না, সেজন্য আমাদের সমাজ-পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘র্যাব সেবা সপ্তাহ’- পালন করছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এ উপলক্ষে এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় র্যাব সদর দপ্তরে শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে ‘দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা সহায়তা, বই বিতরণ এবং সনদপত্র প্রদান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, পরিবারকে জানতে হবে তার ছেলে বা মেয়ে কোথায়, কার সঙ্গে মিশে, কি করে, কখন যায়, এটা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল। এটি অবশ্যই সন্তানের বাবা-মাকে নিতে হবে। পরিবারকে জানতে হবে, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল। সন্তান জন্ম দিলে দায়-দায়িত্ব বাবা-মাকে নিতে হবে। দায়িত্ব নেবেন না, তবে জন্ম দিয়েছেন কেন? এটি বাবা-মার সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।
সন্তানের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধের বিষয়গুলো ঢোকানো দায়িত্ব বাবা-মার। নতুন প্রজন্ম সামাজিকভাবে বিলুপ্ত বা বিনাশ হবে তা হতে দেওয়া যাবে না। এটা সুস্থ জাতি সত্তার কাজ হতে পারে না।
আইজিপি
পুলিশ প্রধান বলেন, আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে বয়সী সবাই শিশু। মানবাধিকার কর্মীরা, এনজিওকর্মীরা হইচই করে অনেক আইন কিন্তু পরিবর্তন-সংশোধন করেছেন। কিন্তু কলাবাগানে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কিন্তু সুস্পষ্ট ক্রাইম। এখানে ধর্ষণের পাশাপাশি মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। অথচ আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী উভয় কিন্তু শিশু। অথচ আমরা এ আইনগুলো করেছি। অবশ্যই আমাদের আধুনিকায়ন দরকার, আইজিপি হিসেবে আমি দ্বিমত পোষণ করি না। তবে অত্যাধুনিক আইন করতে গিয়ে আমরা দেশের মধ্যে কোনো সমস্যা তৈরি করছি কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
আইজিপি বলেন, বর্তমান আইনে কোনো শিশুকে থানায় আনলে নারী কর্মকর্তা লাগবে। কারেকশন সেন্টার, চিল্ড্রেন, প্রবেশন অফিসার লাগবে। ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের থানায় নিয়ে আসতে হলে প্রবেশন অফিসার লাগবে। অথচ কোথায় সে প্রবেশন অফিসার সেটা আমরা জানি না। লাগবে চাইল্ড কোর্ট। তো আমাদের দেশে কয়টা শিশু আদালত রয়েছে? জেলে রাখা যাবে না, রাখতে হবে কারেকশন বা সংশোধনাগারে। তো কয়টা সংশোধনাগার রয়েছে?
যারা মানবাধিকার সংস্থা বা শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন তাদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, এসব নিয়ে কথা বলেন। হাইকোর্ট বলেছেন, শিশুদের মোবাইল কোর্ট দিয়ে সাজা দেওয়া বা জেলে রাখা যাবে না, তাহলে রাখবো কোথায়?
কলাবাগানে ধর্ষণের পর কিশোরীর মৃত্যু প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, যা ঘটেছে তা ক্রাইম। অথচ দুজনই শিশু। পরিবারকে বলবো, ভাত খাওয়ালেই হবে না। রাষ্ট্রের উপযোগী নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সে দায়িত্ব পরিবারের বেশি।
আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ এখন কোটিপতি অসংখ্য। শত শত কোটিপতি ইনকাম ট্যাক্সের হিসেবেই। ইনকাম ট্যাক্সের বাইরে হাজার হাজার কোটিপতি রয়েছে। একজন টাকা রোজগার করলে রাষ্ট্র ধনী হয়। রাষ্ট্র ব্যবসা করে না, ব্যবসা-বাণিজ্য নাগরিকরা করে। রাষ্ট্র সুযোগ করে দেয়।
আইজিপি বলেন, আমরা ২০৪১ সালে ধনী রাষ্ট্র হতে চাই। কিন্তু উন্মত্তের মতো ধনী হলেই হবে না, আশপাশের মানুষেরও দায়িত্ব নিতে হবে। যাতে করে আমরা জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, সৎ ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে র্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেইউ/এসএম