পেটে টান পড়েছে পরিবহন শ্রমিকদের
গত কয়েক বছর ধরে দিগন্ত পরিবহনে হেলপারের কাজ করে খুলনার কিশোর আকাশ। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে প্রতিদিনের ডিউটির টাকা দিয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার। কিন্তু দফায় দফায় লকডাউনে বন্ধ থাকে দূরপাল্লার বাস চলাচল। টান পড়ে আকাশের রোজগারেও। সবশেষ গত ২৩ জুলাই ভোরে খুলনা থেকে গাড়ি নিয়ে ঢাকায় এসে অন্য পরিবহন শ্রমিকদের মতো আটকা পড়ে আকাশও।
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বেকার সময় পার করছে আকাশ। ঈদে যা রোজগার হয়েছিল তা দিয়ে গত কয়েক দিন কোনো রকম কেটেছে তার। কিন্তু এখন হাত একদমই খালি। এ অবস্থায় আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কীভাবে দিন পার হবে তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় সে।
বিজ্ঞাপন
এ অবস্থা শুধু হেলপার আকাশের একার নয়। তার মতো কঠিন সময় পার করছেন রাজধানীর অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিকরা। রোজগার বন্ধ থাকায় গাবতলী বাস টার্মিনালে মানবেতর জীবন পার করছেন তারা।
আকাশ বলে, আগে একবার লকডাউনে ঢাকায় আটকা পড়েছিলাম। তখন আমাদের দিনে দুই এক বেলা খাবার দিত মালিকরা। এবার আর কেউ খোঁজও নিচ্ছে না। আমার মতো এখানে ২৫ থেকে ৩০ জন পরিবহন শ্রমিক আটকা পড়েছে। আমরা না খেয়ে দিন পার করছি। আমি নিজেও গতকাল কিছু খাইনি। আজ খেতে পারব কি না জানি না।
বিজ্ঞাপন
সে বলে, ঢাকায় আসার আগে পরিবহন মালিকরা বলেছিল, আটকে গেলেও আলাদা গাড়িতে পরিবহন শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু মালিকরা তাদের কথা রাখেনি। মাত্র ২০০ টাকা হাতে দিয়ে তারা আমাদের বলল, যে যেভাবে পারো বাড়িতে চলে যাও। কিন্তু আমরা কীভাবে যাব? ২০০ টাকায় বাড়িতে যাওয়া যায়? মালিকরা এখন গাড়িতেও থাকতে দিতে চায় না।
আরেক পরিবহন শ্রমিক সাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঢাকাতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকি। যেহেতু পরিবহনে ডিউটি করি সেহেতু আমাদের দৈনিক খোরাকি দেওয়ার কথা মালিকদের। আমরা খেয়ে আছি নাকি না খেয়ে আছি এগুলো নিয়ে মালিকদের মাথাব্যথা নেই। উল্টো তারা বলছে, টার্মিনাল ছেড়ে চলে যেতে।
হাবিবুর নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আমরা সারাদিনই টার্মিনালে থাকি। খুব অসহায় অবস্থায় দিন পার করতে হচ্ছে আমাদের। কেউ কোনো খোঁজ নেয় না। অনেক সহায়তা বা সরকারি অনুদান আসলেও আমাদের পর্যন্ত এসে সেগুলো পৌঁছায় না। এখানেই সারাদিন খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।
বাস মালিক সমিতির মহাসচিব মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দফায় দফায় লকডাউন চলছে। এতে বাস-মালিকরাও ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন। তাই শ্রমিকদের তেমন সহযোগিতা করতে পারেননি। তবে সম্প্রতি আমরা পরিবহন শ্রমিকদের জন্য চাল বরাদ্দ পেয়েছি। যা আগামীকাল থেকে রাজধানীর সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও মহাখালীতে বিতরণ করব। গাবতলীতে এ কার্যক্রম দুদিন পর শুরু হবে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছে সরকার। যা চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। বিধিনিষেধ চলাকালে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
এসআর/এসকেডি