ঢাকার আকাশ রাঙাবে ডিএসসিসি
আগামী ১৪ জানুয়ারি আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ঢাকার আকাশ রাঙিয়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটোরিয়ামে সাকরাইন (ঘুড়ি উৎসব-১৪২৭) উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
ডিএসসিসি মেয়র তাপস বলেন, আপনারা সকলেই জানেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহার আমি উল্লেখ করেছিলাম- ঐতিহ্যের ঢাকাকে আমরা গড়ে তুলব। আমাদের ঐতিহ্যের ঢাকার মূল উপাদানের হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি ও উৎসবগুলো। এগুলো আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ও সমাদৃত। সাকরাইন বা ঘুড়ি উৎসব আমাদের সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। তাই আগামী ৩০ পৌষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডেই প্রথমবারের মত একযোগে সাকরাইন উৎসবের আয়োজন করতে যাচ্ছি। আমরা সাকরাইন বা ঘুড়ি উৎসবকে শুধু ঢাকা শহরেই নয়, সারা বিশ্বে পৌঁছে দিতে চাই।
জানা গেছে, ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’ স্লোগানে আগামী ১৪ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো একযোগে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে সাকরাইন উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।
বিজ্ঞাপন
আয়োজনের অংশ হিসেবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের ৭৫ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের ২৫ জন নারী কাউন্সিলরকে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে ১০০ করে মোট ১০ হাজার ঘুড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। কাউন্সিলররা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডের জনসাধারণের মাঝে এসব ঘুড়ি বিতরণ করবেন। এসব ঘুড়ি কমিটির নির্ধারিত মাঠ বা বাড়ির ছাদে ওড়ানো হবে।
ইট-পাথরের বেড়াজালে ঢাকাকে রুগ্ন সত্তায় পরিণত না করে ঐতিহ্য লালনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তাপস।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমার মনে হয় না এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যের প্রয়োজন আছে। জনগণ তার বক্তব্যের বিষয়টা খুব হাস্যকর হিসেবে নিয়েছে। তাই এ বিষয়ে কথা বলা সমীচীন নয়, কারণ আমি একটি দায়িত্বশীল পদে রয়েছি। অনেকে বিভিন্ন মন্তব্য করতে পারে, দায়িত্বশীল পদে যিনি থাকেন তাকে নিয়ে নানা মন্তব্য আসতে পারে। সব মন্তব্য তো আর গুরুত্ব বহন করে না। সেটার প্রেক্ষিতে মন্তব্য করাও সমীচীন না।
তাহলে কি আপনি আর আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, গতকাল যে দুটো মামলা হয়েছে, এই দুটো মামলার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না। সেগুলো অতি উৎসাহী কিছু ব্যক্তি আমার বিনা অনুমতিতে মামলা করেছে। আমি আশা করব তারা এই মামলাগুলো প্রত্যাহার করবে। যদি সেরকম কোনো পরিস্থিতি দাঁড়ায়, পর্যালোচনাপূর্বক সেটা ভবিষ্যতে বিবেচনা করা হবে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা পর্যালোচনা করছি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন বোধ করলে মামলা হতে পারে।
ডিএসসিসি মেয়র আরও বলেন, আমাদের দায়িত্ব মার্কেটে অবৈধ যে দখলদার আছে, সেগুলোর বিষয়ে অভিযান চলমান রয়েছে। দুটো মার্কেটে আমরা সম্পন্ন করেছি। ভবিষ্যতে কৌশল অবলম্বন করে অন্যান্য মার্কেটেও অভিযান করব। আমরা শুধু মার্কেট না, জলবদ্ধতা নিরসনেও কাজ করছি। এসব বিষয় নিয়ে আমরা হাস্যরসের পাত্র হতে চাই না। আমার হাতে সময় নেই।
এসময় তিনি আরও বলেন, গত ছয় মাসে যে বাজেট দিয়েছিলাম আমরা রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করতে পেরেছি। ৩৪৪ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই করোনা মহামারির মাঝে। আমরা যে লক্ষ নির্ধারণ করেছি, সেই লক্ষ্য পূরণে আমরা ব্যস্ত রয়েছি। আমাদের অনেক কাজ রয়েছে। আমাদের আরও কাজ করার সুযোগ দেবেন। ভুল হলে সেগুলো আমাদের দেখিয়ে দেবেন। কিন্তু এরকম অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত বিষয় নিয়ে সময়ক্ষেপণ করার সময় নেই।
মধুমতি ব্যাংকে টাকা ‘হস্তান্তরিত’ করার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র আরও বলেন, মধুমতি ব্যাংক গত সাত বছর ধরে সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করে থাকে। আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করার আগেও মধুমতি ব্যাংকের সাথে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ব্যাবসায়িক বা সেবামূলক লেনদেন ছিল। তখন আমানত হিসেবে দক্ষিণ সিটির অর্থ মধুমতি ব্যাংকে ছিল এখনো আছে।
সুতরাং মধুমতি ব্যাংকে শুধুমাত্র আমি একজন পরিচালক হিসেবে এখানে কোনো অযাচিত বা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কিছু করা হয়েছে এমনটা না। সেখানে এমন কোনো নথি দেখাতে পারবে না, আইন বহির্ভূতভাবে-অনৈতিকভাবে কিছু করা হয়েছে। এ বিষয়ে শুধু উনাকেই নয় দেশের সবাইকে আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিযানটা অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। আমাদের অভিযান তার বিরুদ্ধে না। সেই অবৈধ দখলদারদের সাথে তার কি লেনদেন হয়েছে, সেটা তো আগের বিষয়। যখন তারা কাগজপত্র দেখাতে পারেনি, আদালতের আশ্রয় নিতে পারেনি, তখনই তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে বলেছে - তাদের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নেওয়া হয়েছিল, অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়েছিল (এই বলে যে) তাদের বৈধ করা হবে। কিন্তু পরে বৈধ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, ডিএসসিসির কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
এএসএস/ওএফ