লাঠিটিলা বন সংরক্ষণসহ ৬ দফা দাবি সুরক্ষা মঞ্চের
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় অবস্থিত লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক বা যেকোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের বিরোধিতা করে ৬ দফা দাবি জানিয়েছে প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ।
রোববার (৮ আগস্ট) সংবাদ মাধ্যমে প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার পক্ষে কাজী মাহির তাজওয়ারের পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মঞ্চের অন্যান্য পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো- উন্নয়নের নামে বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করা যাবে না। লাঠিটিলা বন নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাংবাদিককে হুমকি প্রদানকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিৎ করতে হবে এবং প্রাকৃতিক বন ও জলাভূমির জন্য হুমকি এমন সকল উন্নয়ন-অবকাঠামো প্রকল্প বাতিল করতে হবে। এ ধরনের প্রকল্প পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চল জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এক প্রাকৃতিক বনভূমি ও বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। জেলার একমাত্র সংরক্ষিত বন হিসেবে চিহ্নিত ক্রান্তীয় চিরসবুজ এই বনে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ ও প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে বন বিভাগ। এই সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক স্থাপন করা হলে বনভূমি ও জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বনের মধ্যে অবস্থিত ছয়টি গ্রামের অন্তত ৩০০ পরিবার ও বননির্ভর স্থানীয় জনগোষ্ঠী উচ্ছেদের আশঙ্কা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও বলা হয়, ৯৮০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের আওতায় পর্যটকদের জন্য নানা অবকাঠামো, হোটেল-মোটেল, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, উপকেন্দ্রসহ ভারি অবকাঠামো নির্মিত হবে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ দর্শনার্থী ভ্রমণ করবেন। সেগুনবৃক্ষ প্রধান ওই বনভূমির ৫ হাজার ৬৩১ একর জুড়ে সাফারি পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও ৫০ কিলোমিটার উত্তরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান আছে। সেখানে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে হাতি, উল্লুক, মায়া হরিণ, উল্টোলেজি বানর, আসামি বানর, মুখপোড়া হনুমান রয়েছে। এছাড়া আরও অসংখ্য বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে।
তাছাড়াও এই বনাঞ্চলের কাছাকাছি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংরক্ষিত অভয়ারণ্য থেকে বিভিন্ন পশু-পাখির নিয়মিত যাতায়াত ঘটে যা সাফারি পার্কের ভৌত অবকাঠামোর কারণে বাধাপ্রাপ্ত হবে। ইতোপূর্বে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি এই প্রকল্পের সমীক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। যা সংরক্ষিত বনের মধ্যে উক্ত সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের সার্বিক উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি দেশের অন্যতম একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তেমনি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর, অনলাইনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জুড়ী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সাফারি পার্ক সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সাংবাদিকের বাড়ি ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছেন। যা গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি হুমকি বলে আমরা মনে করি।
এমএইচএন/ওএফ